-->
শিরোনাম

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: নেপথ্যের কারিগরদের দেখার অপেক্ষায় স্বজন

ইদ্রিস আল
পিলখানা হত্যাকাণ্ড: নেপথ্যের কারিগরদের
দেখার অপেক্ষায় স্বজন

২৫ ফেব্রুয়ারি এলেই বনানীর কবরস্থান এলাকায় শুরু হয় শোকের মাতম। স্বজনহারা পরিবারের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ। গতকালও তার ব্যত্যয় হয়নি। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চোখের জ্বলে ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

অনেকে পরিবারের শেষ মানুষটিকে হারিয়েছেন। স্বপ্ন ভেঙেছে অনেক পরিবারের। কারো হাতের মেহেদী না শুকাতেই ধরতে হয়েছে বিধবার বেশ। অনেক সন্তান ভুলে গেছে বাবার চেহারা। ছবি আর মায়ের মুখে শোনা গল্প ছাড়া

কিছুই মনে নেই তাদের।

বাবার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে বাবাহারা সন্তানরা কান্নায় ভেঙে পড়ছে। সেদিনের সেই ছোট্ট সন্তান আজ অনেক বড় হয়েছে। দাবি করতে শিখেছে আবার হত্যার বিচার।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি। প্রথম দিন দুপুরের সময় হঠাৎ করে গোলাগুলির বিকট শব্দ। ধানমন্ডির পিলখানা এলাকায় বসবাসকারীরা মনে করেছিলেন প্রতিদিনের মতোই চলছে প্রশিক্ষণ। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে

ভয়ংকররূপে পরিণত হয় ধানমন্ডি জিগাতলা এলাকা। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এরই মধ্যে জেনে যায় এটি কোনো প্রশিক্ষণ নয় চলছে হত্যাকাণ্ড।

শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলছেন, পিলখানায় ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞ নিছক কোনো বিদ্রোহের ঘটনা ছিল না। এটি একটি পরিকল্পিত টার্গেট কিলিং। যারা এখন বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন, তারা আসলে নেপথ্যের কারিগর নয়। যারা

এ ঘটনার আসল কারিগর তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত শহীদ পরিবারের সদস্যদের মনে শান্তি আসবে না। গতকাল শুক্রবার সকালে বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদ সেনা

কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

এ বিষয়ে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ কর্নেল কুদরত-ই-এলাহীর ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বলেন, নেপথ্যে যারা ছিল তারা অনেক শক্তিশালী এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ঘটনার পেছনে

আরো লোক আছে। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে, কিন্তু নেপথ্যের কারিগরদের শনাক্ত করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। পিলখানা হত্যাযজ্ঞে নিহত মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের বড় বোন হোসনে

আরা পারভীন বলেন, এ ঘটনার নেপথ্যে কারা গত ১৩ বছরেও আমরা তাদের চিনতে পারিনি। আমাদের একটাই চাওয়া, আপনজন হত্যাকারীদের যেন বিচার দেখে যেতে পারি।

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। যথাযথ মর্যাদায় গতকাল শুক্রবার পিলখানা হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ১৩তম শাহাদতবার্ষিকী পালন হয়েছে। বহুল

আলোচিত এ ঘটনায় করা মামলায় (পিলখানা হত্যা মামলা) ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। তবে এ

ঘটনার ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আক্ষেপ রয়েছে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মনে।

এদিকে ঘটনার ১৩ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও দোষীদের বিচার কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা দ্রুত এ বিচার কাজ সম্পন্ন ও দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিতের দাবি

জানিয়েছেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিডিআর বিদ্রোহে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে, এখন এটার রায় কার্যকর করা হবে। মামলার যে বিষয়টি চলমান রয়েছে, সেটা খুব শিগগিরই শেষ হবে বলে।

এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, পিলখান হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত হয়েছে, এর বিচারকার্য হয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনো প্রশ্ন আছে।

এতবড় একটি হত্যাকাণ্ড হঠাৎ করেই হয়নি। এর পেছেনে অবশ্যই বড় ধরনের কোনো ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু কথা হচ্ছে কেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিষয়টি জানতে পারেনি? আবার যদি জানতে পারেন তাহলে কেন এই ষড়যন্ত্র

প্রতিরোধ করা হলো না। এই বিষয়গুলো এখনো মানুষের মনে সংশয়, সন্দেহ এবং বেদনা সৃষ্টি করে।

এ উপলক্ষে বনানীতে সামরিক কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর

সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ,

নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

মন্তব্য

Beta version