-->

যুবকের জীবন রক্ষায় ফায়ার ফাইটারদের রুদ্ধশ্বাস অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক
যুবকের জীবন রক্ষায় ফায়ার ফাইটারদের রুদ্ধশ্বাস অভিযান
এই ভয়েড স্পেস দিয়ে ৪০ ফুট নিচে পড়ে যায় যুবক সালমান (২৪)

২৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাত। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২-৪৫টা। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সংবাদ আসে অজ্ঞাত এক যুবক পড়ে গেছে ৪০ ফুট গভীরে। উদ্ধারে সূত্রাপুর রেসকিউ ইউনিট। সিনিয়র স্টেশন অফিসার সাইফুলের নেতৃত্বে

সূত্রাপুরের ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে সাহায্য চায় ঢাকা হেড কোয়ার্টারের। ডিএডি বজলুর রশিদের নেতৃত্বে স্টেশন অফিসার শহিদুল ইসলাম সুমনসহ ৬ জনের একটি উদ্ধারকারী দল রাত ১টা ১৫মিনিটে ছুটে যায় ঘটনাস্থলে।

বলছি, সোমবার ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযানের কথা। ঘটনাস্থল পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া ডিস্টিলারি রোডের (ধূপখোলা মাঠের পশ্চিম পাশে) একটি চারতলা বাড়িতে।

যেভাবে চলে রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযান:

অ্যাম্বুলেন্সসহ সদর দপ্তরের রেসকিউ ইউনিটটি ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানতে পারেন, ৪ তলা ভবনের পাশে একটি ভয়েড স্পেস দিয়ে একজন যুবক নিচে পড়ে গেছেন। উদ্ধারকারীরা ভবনের ছাদে গিয়ে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার সুড়ঙ্গে

লাইটের আলো ফেলে অস্পষ্টভাবে দেখতে পান পড়ে থাকা যুবককে। চারটি ভবনের সংযোগস্থলে ৩ ফুট বাই ২ ফুটের অপ্রশস্ত ভয়েড স্পেসটি ওপর থেকে দেখলে মনে হয় মাটির নিচে চলে যাওয়া কোনো অন্ধকার সুড়ঙ্গ পথ।

নিচে পড়ে থাকা ব্যক্তির তখনো চেতনা আছে, গুরুতর আহত হয়ে গোঙরাচ্ছেন। উদ্ধারকারীদের প্রশ্নে রেসপন্স করতে পারছেন তিনি। উদ্ধারকারীরা নিশ্চিত হয় তার জীবিত থাকার বিষয়টি।

যেভাবে অন্ধকার সুড়ঙ্গে নামে উদ্ধারকারী সদস্য:ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য জানার পর উদ্ধার কৌশল নির্ধারণ করা হয়। শুরু হয় শ্বাসরুদ্ধকর উদ্ধার অভিযান। ডিএডি বজলুর রশিদের নির্দেশনায় স্টেশন অফিসার শহিদুল ইসলাম সুমন দায়িত্ব বণ্টন করেন

উদ্ধারকারীদের। চৌকস উদ্ধারকর্মী মুক্তারকে ব্রিদিং অ্যাপরেটাস পরিয়ে আর ফুলবডি হারনেস বেঁধে নামানো হয় অন্ধকার সুড়ঙ্গে। সঙ্গে দেয়া হয় অতিরিক্ত আরেকটি ফুলবডি হারনেস। ওপর থেকে হারনেসের প্রান্ত ধরে রাখেন

অপর উদ্ধারকর্মীরা। দুরন্ত সাহস আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্ধকারের ভয়কে জয় করে সহকর্মীদের সহায়তায় মুক্তার পৌঁছে যান সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে, আহত অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে থাকা যুবকের কাছে।

উদ্ধারকর্মীকে কাছে পেয়ে বিচলিত যুবক বেঁচে থাকার আকুতি জানায়। তাকে অভয় বাণী শুনিয়ে ফায়ারফাইটার মুক্তার সঙ্গে রাখা অতিরিক্ত ফুলবডি হারনেসে সুরক্ষিত করে বেঁধে ফেলে আহত ব্যক্তিকে। এবার ওপরে সংকেত

পাঠান আহত ব্যক্তিকে টেনে তোলার জন্য।

চারতলা থেকে পড়ে যাওয়া সুড়ঙ্গের নিচে আটকে থাকা যুবক সালমানকে (২৪) জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা। আহত যুবকের অবস্থা তখন করুণ। তিনি কিভাবে সেখানে পড়লেন, কেন

সেখানে এসেছিলেন, পড়ার পর তার অবস্থা কি হয়েছিল, তিনি কেমন অনুভব করছেন, মৃত্যু ভয় তাকে তাড়িত করছে কি না - এসব তথ্য শোনার চেয়ে তার জীবন রক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানোকেই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেন

উদ্ধারকর্মীরা। টিমের সঙ্গে থাকা ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে সালমানকে পৌঁছে দেয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে।

উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয় রাত ২টা ২০মিনিটে। কর্মস্থলে ফিরে আসেন উদ্ধারকারীরা। তাদের চেহারায় লেগে থাকলো সাফল্যের অপার্থিব আলো, জীবন বাঁচানোর অবর্ণনীয় এক আত্মতৃপ্তি।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল এবং পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্ণেল জিল্লুর রহমান, পিএসসি উদ্ধার অভিযানের ভিডিও

দেখে উদ্ধারকারীদের আন্তরিক অভিনন্দনে সিক্ত করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, উদ্ধারকৃত সালমানের কোমড়ের হাড় ভেঙে গেছে। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

চিকিৎসাধীন আছেন।

 

মন্তব্য

Beta version