-->
শিরোনাম

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অভিন্ন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক 
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অভিন্ন
 
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ভিন্ন হলেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য দু’দেশের রূপকল্প অভিন্ন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
 
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) 'ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে অগ্রযাত্রা: উন্মুক্ত, সহিষ্ণু ও আন্তঃসংযুক্ত বঙ্গোপসাগর ও বহির্বিশ্বের উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে ঢাকায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন এসব কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
 
তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটিকে অবশ্যই সবার জন্য শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ অঞ্চল হতে হবে। এই অঞ্চলের জন্য আমাদের লক্ষ্য হল অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চল।
 
বিভিন্ন ধরনের হুমকি বাড়ছে, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদার করব। এর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা আবশ্যক।
 
সহিংস চরমপন্থা থেকে শুরু করে অবৈধ মাছ শিকার ও মানব পাচারের মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড় নিরাপত্তা সহযোগিতা স্থাপনের প্রচেষ্টা নেবো।
 
এসব চ্যালেঞ্জ ও আরো বহু বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত।
 
গত বছর আমরা বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে ১০টি মেটাল শার্ক বোট ও ১০টি ডিফেন্ডার ক্লাস বোট প্রদান করেছি।
 
বাংলাদেশের আঞ্চলিক জলসীমা ও একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল সুরক্ষিত রাখা, সব ধরনের পাচার প্রতিরোধ এবং বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই জাহাজগুলো সহায়তা করবে।
 
সর্বোপরি, আমরা আন্তর্জাতিক হুমকি মোকাবেলায় আঞ্চলিক সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে সহায়তা করব।
 
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশ তাদের স্থল ও সমুদ্র-সীমান্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে বঙ্গোপসাগরকে বিশ্বের কাছে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত করে তুলেছে।
 
তা ছাড়া অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল হবে এমন একটি এলাকা যেখানে মালামাল, ধারণা ও মানুষ অবাধে স্থল, সাইবার পরিসর ও উন্মুক্ত সমুদ্রে চলাচল করবে।
 
এ অঞ্চলের সমুদ্র ও আকাশপথ যাতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত ও ব্যবহৃত হয় সেটা নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ ও অন্যান্য অংশীদারদের সাথে কাজ করবো।
 
অত্যাবশ্যক ও বিকাশমান প্রযুক্তি, ইন্টারনেট ও সাইবার পরিসর বিষয়ে গোপনীয়তা ও মানবিক মর্যাদা সুরক্ষাকারী যৌথ পন্থাগুলোকেও আমরা এগিয়ে নিতে সচেষ্ট হবো।
 
আমরা অব্যাহতভাবে এই অঞ্চলের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে শক্তিশালী সংযোগ গড়ে তুলবো। যৌথ সমস্যা মোকাবেলায় আমাদেরকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ জনগোষ্ঠী হিসাবে কাজ করতে হবে।
 
পিটার হাস বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমসটেক সচিবালয়ের আয়োজক, ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ার এবং সার্ক, কলম্বো প্ল্যান ও আরো বহু কিছুর সক্রিয় সদস্য হিসেবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও নেতৃত্বশীল ভূমিকা রাখছে।
 
প্রতিবেশী দেশগুলোকে সহায়তা দেয়ার গুরুত্বও বাংলাদেশ জানে- যেমন তারা মালদ্বীপকে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সহায়তা দিয়েছে কিংবা শ্রীলঙ্কায় তীব্র নগদ অর্থ সংকটকালে মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে সহায়তা করেছে।
 
রাষ্ট্রদূত হিসাবে আমি একসাথে যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
 
আমাদের বন্ধন শুধু আমাদের দুদেশের সরকারকেই সংযুক্ত করে না বরং আমাদের দুদেশের জনগণের মধ্যেও সেতুবন্ধন তৈরি করে।
 
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলপত্রে পাঁচটি মূল উপাদান রয়েছে যা এ অঞ্চলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী সম্পৃক্ততার পথ নির্দেশ করে।  যুক্তরাষ্ট্র এমন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্বপ্ন দেখে যা হবে: অবাধ ও উন্মুক্ত আন্তঃসংযুক্ত সমৃদ্ধশালী নিরাপদ, ও ঝুঁকি-সহিষ্ণু।
 
যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গঠনের বিষয়টিকে এগিয়ে নেবে। এর অর্থ এমন একটি অঞ্চল যেখানে স্বচ্ছভাবে সমস্যার সমাধান করা হবে ।
 
নিয়মনীতি প্রণীত এবং প্রয়োগ করা হবে ন্যায়সঙ্গতভাবে। প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব পথ ও তাদের নিজস্ব অংশীদার বেছে নিতে সক্ষম হবে।
 
তিনি বলেন, একটি বিষয় আমি সুস্পষ্ট করতে চাই। এই নীতি-আদর্শগুলো সুরক্ষার লক্ষ্য কোনো দেশকে দাবিয়ে রাখা নয়। বরং সব দেশের জন্য তাদের নিজ নিজ পথ বেছে নেওয়ার অধিকার সুরক্ষা করা, যা হবে জবরদস্তি ও ভয়ভীতিমুক্ত।
 
বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে তুলতে এবং আমাদের সকল নাগরিকের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদেরকে নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগে সহায়তা দিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
 
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক পরিকাঠামো তৈরি করছি। এতে যৌথ উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে প্রধান যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে: জলবায়ু বান্ধব ও দূষণমুক্ত জ্বালানি, ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্য সুবিধা ত্বরান্বিতকরণ, ঝুঁকি-সহিষ্ণু সরবরাহ ব্যবস্থা ও ডিজিটাল অর্থনীতি।
 
ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল কোনো সামরিক জোট নয়।  এর উদ্দেশ্যও সেটা নয়।
 
ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল যুক্তরাষ্ট্রপন্থী অঞ্চল বা চীনপন্থী অঞ্চলের মধ্যেকার প্রতিযোগিতাও নয়।  প্রকৃতপক্ষে, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে স্বাতন্ত্র্য অঞ্চল হিসাবেই দেখি।
 
ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি কোনো দেশকে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কোনটিকে বেছে নেয়ানোর উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়নি।  কৌশলটির অন্যতম মূলনীতি হলো, প্রতিটি দেশই চাপ বা জবরদস্তি ছাড়াই নিজস্ব পথ বেছে নিতে সক্ষম হবে।
 
সংক্ষেপে, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি এমন একটি অঞ্চল তৈরির এক ইতিবাচক ও সম্মিলিত রূপকল্প যার আওতায় সমস্ত দেশ তথা বাংলাদেশ, চীন, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও এ অঞ্চলের দেশেগুলোর প্রতিটি জেলাই উন্নতি লাভ করতে পারবে।   
 
২১ শতকের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যেমন জলবায়ু সংকট, বিশ্ব স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এবং দেশগুলো স্বাধীনভাবে তাদের নিজস্ব পথ বেছে নিতে পারবে কিনা তার সবই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত।
 
অন্য যেকোন অঞ্চলের তুলনায় এ অঞ্চলের সম্ভাব্য ঘটনাগুলো একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক গতিপথ রূপায়ণে সবচেয়ে সক্রিয়  ভুমিকা রাখবে।
 
তাই এই যৌথ রূপকল্প বাস্তবায়নের অংশীদার হিসাবে আমাদের একসাথে কাজ করা জরুরি।

মন্তব্য

Beta version