আগামী বাজেটে ধনীদের ওপর করহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সেই সঙ্গে গরিবের নানা ধরনের ভাতা কমপক্ষে এক হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী অর্থবছরে বাজেটকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এ পরামর্শ দেয় সিপিডি।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সময়টি অত্যন্ত কঠিন। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় আগামী বাজেটে এডিপিতে জনতুষ্টির প্রকল্প না নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বর্তমান ‘কঠিন সময়ের’ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে স্বল্প আয়ের মানুষের স্বস্তির জন্য ‘কল্যাণমুখী’ বাজেট করতে বলেছে সংস্থাটি। কারণ দেশের মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, নিম্নআয়ের মানুষকে কীভাবে স্বস্তি দেওয়া যায়, সেটাই হওয়া উচিত আগামী বাজেটের মূল উদ্দেশ্য।’
সিপিডি মনে করে, করোনা-পরবর্তী দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বদলেছে। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বড় করদাতাদের জন্য করহার আগের মতো অর্থাৎ ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা উচিত। করপোরেট করে বিভিন্ন স্তরের পরিবর্তে একটি স্তর নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি এবং এটি হবে ৩০ শতাংশ।
ভাতা বাড়ানোর পরামর্শসমাজে যারা পিছিয়ে আছে তাদের মাঝে কীভাবে আয় বণ্টন নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে সিপিডি। সংস্থাটি মনে করে, বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে বৈষম্য কমে আসবে।
এবার বাজেটে বয়স্ক, বিধবাসহ সব ধরনের ভাতার পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। নিম্ন আয়ের মানুষের সুরক্ষা দিতে খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদও দেওয়া হয়।
ভর্তুকির কাঠামোগত পরিবর্তনের তাগিদও দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি মনে করে, যাদের জন্য ভর্তুকি দেওয়া হয় এর সুফল পান না তারা। এ জন্য যেখানে যেখানে ভর্তুকি প্রয়োজন সেখানে দিতে হবে এবং তা নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
আরো যত পরামর্শপ্রণোদনার কাঠামোতে পরিবর্তনের কথাও বলেছে সিপিডি। সংস্থাটি মনে করে, করোনাকালীন যেসব খাতে কর ছাড় বা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তা এখন তুলে নেওয়া উচিত।
দেশ থেকে টাকা পাচার রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের করা ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলকে আরো শক্তিশালী করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে আমদানির ব্যয়ে চাপ কমাতে বিলাস পণ্যের আমদানি কাটছাঁট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আয় বাড়াতে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের কথা বলেছে সিপিডি। প্রবাসী-আয়ে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন তারা।
সিপিডি মনে করে, ৬ মূল্যস্ফীতির হার সঠিক নয়। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতি হিসাব নির্ধারণের তাগিদও দিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে সিন্ডিকেশন, মজুত, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও চাঁদাবাজিকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘বাজার স্থিতিশীল রাখতে তদারকি আরো জোরদার করতে হবে।’
ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাবও করা হয়েছে। অন্যদিকে অলাভজনক ও মৃতপ্রায় সরকারি প্রতিষ্ঠান ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া নৈতিকতাবিরোধী উল্লেখ করে এটিকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না বলেও মন্তব্য করে সিপিডি।
রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নয়এই প্রস্তাব দিয়ে সিপিডি বলে, নির্বাচন আসলে দেখা যায় রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রভাবিত হয়ে এডিপিতে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নের সুফল সাধারণ জনগণের কাছে ঠিকমতো পৌঁছায় না। তাই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে অর্থনৈতিক বিবেচনায় আগামী বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পকে প্রাধান্য দিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে এডিপিতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ফলে উন্নয়নের সুফল সমভাবে মিলে না। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এমন প্রকল্প নিতে হবে যাতে অর্থনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পায়। জনতুষ্টির প্রকল্প নয় বরং অর্থনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী বাজেট হতে হবে কল্যাণমুখী। নতুন বাজেটে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মন্তব্য