বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পগুলো পর্যাপ্ত এবং সর্বজনীন নয়। এ প্রকল্পগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে স্বল্প পরিসরে অর্থাৎ অ্যাডহক ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়, যা সুরক্ষা প্রদানের জন্য কার্যকরী নয়। জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে (এনএসএসএস) বর্ণিত জীবনচক্র পদ্ধতির মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় ঢেলে সাজানো দরকার। এবারের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বরাদ্দ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
'খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ' এর পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়েছে।
বুধবার (২০ এপ্রিল) ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ নেটওয়ার্কের উদ্যোগে ‘বরাদ্দ, উপকারভোগী নির্বাচন ও নতুন দারিদ্র্যের বাস্তবতায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।
নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী কানিজ ফাতেমার সঞ্চালনায় এবং খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ'-এর সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।
আয়োজকদের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন-অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এর ডেপুটি ম্যানেজার অমিত রঞ্জন দে। এ ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর প্রমুখ।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে একটি পরিবার বা ব্যক্তি যে বরাদ্দ পেয়ে থাকেন তা অবশ্যই অপ্রতুল। তবে এটা বৃদ্ধির চেষ্টা আমরা করছি। রেশনিং ফিরিয়ে আনা যাবে কি-না সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সেটাকে সমন্বয় করার বিষয় রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মি বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় প্রতি বছর যে বরাদ্দ বাড়ছে, তার কারণ এ বরাদ্দ পাবার মতো উপকারভোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। আর এ বরাদ্দের অনেকখানিই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনের পেছনে। জীবনচক্র ভিত্তিক কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকাও এ কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, দরিদ্র মানুষকে দয়া করে বরাদ্দ বৃদ্ধি বা সহায়তা করার মনোভঙ্গি বাদ দিয়ে মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করে, মানুষের অধিকার হিসেবে, দায়বদ্ধতা থেকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে ৮টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
১) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নতুন দরিদ্রদের অন্তর্ভুক্ত করা; ২) দরিদ্রদের ডিজিটাল তথ্য ভান্ডার (নতুন দরিদ্রসহ) তৈরি; ৩) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ, বিভিন্ন ধরণের বৃত্তি এ সকল খাত বাদ দেয়া; ৪) শহর দরিদ্র বিশেষত যারা বস্তিতে আছে, তাদের জন্য বেশি বরাদ্দের পাশাপাশি নতুন কর্মসূচি গ্রহণ; ৫) এনএসএস-এর সুপারিশগুলো সংযুক্ত করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির নতুন বিন্যাস; ৬) ওএমএস-এর কার্যক্রম আরও বাড়ানো; ৭) মূল্যের স্থিতিশীলতা ধরে রাখার জন্য স্বল্পমেয়াদীর (বৃহত্তর পর্যবেক্ষণ, রেশনিং ইত্যাদি) পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী (মূল্য কমিশন প্রতিষ্ঠা) পদক্ষেপ গ্রহণ; ৮) কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ।
মন্তব্য