-->
শিরোনাম

বাংলাদেশে আশ্রয় চাননি শ্রীলঙ্কার কোনো নেতা

তরিকুল ইসলাম
বাংলাদেশে আশ্রয় চাননি শ্রীলঙ্কার কোনো নেতা
মাহিন্দা রাজাপাকসে ও গোতাবায়া। ছবি সংগৃহীত

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পরবর্তী শ্রীলঙ্কার নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়াসহ দেশটির সার্বিক পরিস্থিতি নজরে রেখেছে বাংলাদেশ।

সেই সঙ্গে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগ ও সহযোগিতা নিয়েও চাপা উদ্বেগ রয়েছে ঢাকার।

যদিও এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো বাংলাদেশি বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হননি বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারেক আরিফুল ইসলাম।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাচ্যুত নেতারা বিভিন্ন দেশে আশ্রয় চাইছেন, বাংলাদেশেও আশ্রয় চেয়ে কোনো আবেদন এসেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, কোনো নেতা বাংলাদেশের কাছে আশ্রয় চাননি। এগুলো আমরা শুনি নাই।

এগুলো মিডিয়ার খবর-টবর। নয়া দিল্লি থেকে একটি রিপোর্ট এসেছে, তারা বলেছে যে না ইন্ডিয়াতে শ্রীলঙ্কার নেতারা যান নাই।

সে দেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার তারেক আরিফুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, সব মিলিয়ে শ্রীলংঙ্কায় বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা প্রায় ৩০০ হবে।

এর মধ্যে কিছু সংখ্যক দেশটির বিভিন্ন শিল্প ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন। অন্যান্যরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে যুক্ত রয়েছেন।

এর বাইরে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীও রয়েছেন। এখন পর্যন্ত সবাই নিরাপদে রয়েছেন এটা বলাই যায়।

শ্রীলঙ্কায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগের জন্য এরই মধ্যে হটলাইন চালু করা হয়েছে।

যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কায় থাকা বাংলাদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের ০৭৪ ২১৫ ৮৭৫০, ০৭১ ২৪০ ৬৩১৩ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবে।

বৈশ্বিকভাবে যখন করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিলো তখন কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি দেশে ফিরে গিয়েছেন উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, তারা অনেকেই পুনরায় শ্রীলঙ্কা ফিরতে পারেননি বা ফিরেননি।

দেশটিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা কম থাকার এটিও একটি বড়ো কারণ।

দেশটির উদ্ভুত বর্তামান পরিস্থিতি ঠিক কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে এটা এখনো বলার সময় আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, চলমান বিক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টায় দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশা নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন।

দেশটিতে বিদেশি মিশনগুলো পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে।

শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের বিনিয়োগ চায় জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, পর্যটন ও কৃষিতে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ টানতে আগ্রহী শ্রীলঙ্কা।

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য কর অবকাশসহ আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা অফার করছে দেশটি।

কলম্বো বন্দরে এখন ৪টি হারবার রয়েছে। আধুনিক আরো সুযোগ সুবিধা সংযুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের পণ্যবাহী বিদেশগামী জাহাজগুলোকে কলম্বো হয়ে যাতে যায় সে অনুরোধও দেশটির পক্ষ থেকে করা হয়েছে।

বিশেষ করে পর্যটন, শিপিংখাতের উন্নয়নেও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ চায় দেশটি। অবশ্য বাংলাদেশ চায় দুদেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি।

এটি করা গেলে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো সহজ হবে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ঢাকা সফর করেন তৎকালীন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা।

সে সময় লঙ্কান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এফটিএ সইয়ের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সময়সীমা গড়ালেও এ নিয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের বছরে আট কোটি ডলারেরও বেশি বাণিজ্য রয়েছে।

এফটিএ চুক্তি সম্পন্ন হলে দেশটির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। দ্বিপক্ষীয় শুল্ক ও শুল্কহীন বাধাও অপসারিত হবে।

এতে উভয় দেশের লাভ হলেও বাংলাদেশ বেশি লাভবান হবে।

এফটিএ নিয়ে কলম্বোর সঙ্গে আলোচনা যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি সইয়ের সম্ভাবনা কম, বরং বিদ্যমান অনিশ্চয়তা আরো প্রকট হবে।

কারণ দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম এফটিএ সইয়ের দরকষাকষি চলছে ২০১৩ সাল থেকে।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিষয়টি আমরা নজরে রাখছি।

অনেকেই আমাদের সতর্ক করেন যে শ্রীলঙ্কার মতো যাতে বাংলাদেশ না হয়। সতর্ক করা ভালো।

কিন্তু শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের তুলনা হয় না। শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যা ২ কোটি ১০ লাখ, আর বাংলাদেশের ১৭ কোটি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানির সংখ্যা অনেক, আর শ্রীলঙ্কার রপ্তানি অল্প। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স করোনার সময়েও ২৫ বিলিয়ন।

শ্রীলঙ্কা তার ধারে কাছে নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অধিকাংশ জিনিস স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য।

শ্রীলঙ্কার সবকিছু বাইরে থেকে আনতে হয়। আমাদের ঋণ জিডিপির মাত্র ১৬-১৭ শতাংশ।

আর শ্রীলঙ্কার অনেক বেশি। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো তুলনা হয় না।

 

মন্তব্য

Beta version