নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা।
এ উপলক্ষ্যে রোববার (১ মে) ভোর থেকেই ভক্তরা জড়ো হন বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে, অংশ নেন প্রভাতফেরী, প্রাতঃরাশ, বুদ্ধপূজা, সংঘদান ও ধর্মসভায়।
এ ছাড়াও সারাদেশে বৌদ্ধ তীর্থস্থানগুলোতে নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা।
শান্তি শোভাযাত্রা, বৌদ্ধ মঠ ও মন্দিরগুলোতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, পূজা ও প্রার্থনা করা হয় বৌদ্ধ বিহারগুলোতে।
গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব, বোধিপ্রাপ্তি আর মহাপরিনির্বাণ- এই স্মৃতি বিজড়িত দিনটিকে বুদ্ধ পূর্ণিমা হিসাবে পালন করেন বুদ্ধ ভক্তরা।
বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে প্রার্থনার আগে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি ভদন্ত বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো বলেন, ‘এই মুহূর্তে যদি তৃতীয় বিশ্ব য্দ্ধু লেগে যায়, তাহলে কেউ বাঁচবে না।
সুতরাং এ থেকে পরিত্রাণ পেতে গৌতম বৌদ্ধের শিক্ষা প্রয়োজন। গৌতম বুদ্ধের গুণাবলী ধারণ ও বহন করতে হবে।
ভালোবাসার মধ্য দিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে বিশ্বে।
বাসাবো বৌদ্ধমন্দির থেকে সকালে বিশ্ব শান্তি কামনায় শোভাযাত্রা হয়। একই সঙ্গে দেশের প্রায় দুই হাজার বৌদ্ধ বিহারে উদযাপিত হয়েছে বুদ্ধ পূর্ণিমা।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, বুড্ডিস্ট ইয়ুথ ফোরাম, বুড্ডিস্ট কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন নানা কর্মসূচি পালন করছে।
রাজধানীসহ দেশজুড়ে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধ পূজা, প্রদীপ প্রজ্বলন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, প্রভাত ফেরি, সমবেত প্রার্থনা, আলোচনা সভা ও বুদ্ধ পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়াও মানব জাতির সর্বাঙ্গীণ শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আর্ন্তজাতিক বৌদ্ধবিহারে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
সকাল ছয়টায় জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয় ।
গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও নির্বাণ লাভ এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন।
তাঁর জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।
দিনটি উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; এসেছে সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় করার আহ্বান।
রাষ্ট্রপতি হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘মহামতি বুদ্ধ একটি সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় আজীবন সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে গেছেন।
‘অহিংসা পরম ধর্ম’ বুদ্ধের এই অমিয় বাণী আজও সমাজে শান্তির জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।
আজকের এই অশান্ত ও অসহিষ্ণু বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্ম-বর্ণ-জাতিতে হানাহানি রোধসহ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহামতি বুদ্ধের দর্শন ও জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে এ দেশের সকল ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি অত্যন্ত জাকজমকভাবে পালন করে আসছে।
এটা এ দেশের সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের চর্চা ও বুদ্ধের মহান আদর্শকে ধারণ করে বৌদ্ধ সম্প্রদায় দেশের উন্নয়নে তাদের কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সকলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উৎসব উদযাপন করবেন। শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা সবার জন্য বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি ও সমৃদ্ধি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বুদ্ধ সত্য ও সুন্দরের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবজগতকে আলোকিত করতে কাজ করে গেছেন।
মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তার জীবনাদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করা প্রয়োজন।
সবাইকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই দেশে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
আমাদের সব ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবগুলো অত্যন্ত আনন্দ ও প্রীতির মাধ্যমে উদযাপন করে থাকে।
আগামীতে বাংলাদেশের সম্প্রীতির চর্চা ও বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করতে আমাদের সবাইকে উদার হয়ে কাজ করতে হবে।
আমরা সম্প্রীতির বাতাবরণে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে চাই।
মন্তব্য