ভোটার নিবন্ধন আইন অনুযায়ী প্রতি বছর তালিকা হালনাগাদের কথা বলা হয়েছে। বিদ্যমান তালিকার সঙ্গে হালনাগাদকৃত তালিকা যোগ করে প্রতি বছর ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের একজন নাগরিক ১৮ বছর হলেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। কিন্তু ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে দেখা গেছে, নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই ভোটার হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। ফলে ভোটার হওয়ার পরে তালিকার বাইরে থেকে যান তারা।
আইন অনুযায়ী ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে তিনি ভোট দিতে পারবেন না। আবার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় নানা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, হালনাগাদে সংগৃহীত তথ্য ইসির সার্ভারে জমা রাখা হয়। সেখানে কোনো ব্যক্তির বয়স ১৮ হলে তিনি স্বয়ক্রিংভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভক্ত হবেন। এ ছাড়াও এই কার্যক্রমের মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়। এত কিছুর পরও এখনো অনেক নারী ভোটার হতে উৎসাহিত হন না।
সম্প্রতি মাঠপর্যায়ের জরিপে মেয়েদের ভোটার না হওয়ার বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে। তারা বলছেন, আগামী ২০ মে থেকে তিন বছর পর নতুন করে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। সেখানে নারী ভোটারের হার বাড়াতে এবার বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইসির মাঠপর্যায়ে সংগৃহীত তথ্য বলছে ৮টি কারণে নারীরা বয়স হওয়ার পরেও ভোটার হতে চান না। এর মধ্যে প্রথম কারণ হলো ভোটার হওয়ার জন্য সনদ হিসেবে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহে অনীহা রয়েছে নারীদের মধ্যে। আবার জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য যেসব ডকুমেন্ট ইউপি পরিষদে জমা দিতে হয় সেটাও তারা জটিল কাজ মনে করে। এ কারণে অনেকই নিজের জন্ম সনদ নেন না। ফলে তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন।
আবার অনেক হিন্দু অবিবাহিত নারীরা নিজের পিতামাতার পরিবারের থেকেও ভোটার নিবন্ধন করতে চান না। অবিবাহিত, অনগ্রসর ও নিরক্ষর মেয়েদের মধ্যে অসচেতনতার কারণেও ভোটার হওয়ার আগ্রহ বেশ কম দেখা গেছে। অনেক মেয়েরা ভোটার হওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হন। বিশেষ করে বাবা-মার জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হন। অনেক ক্ষেত্রে ভোটার রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র দূরে হওয়ার কারণেও সেখানে যেতে চান না। আবহাওয়া অনুকূল না থাকলে কেউ ভোটার হওয়ার আগ্রহ দেখান না। এ ছাড়াও সামাজিক ও ধর্মীয় অজুহাতে অনেকে ছবি তুলতে চান না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের মধ্যে ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অসচেতনতা লক্ষ্য করা গেছে বলে জানান ইসি কর্মকর্তার।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে প্রতি বছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভোটার বাড়ছে। সে হিসেবে এবার প্রায় ৫০ লাখ ভোটারের তথ্য সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু হবে। তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে সংগ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে জন্মগ্রহণকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। অর্থাৎ ১৬ বছর বয়সিদের তথ্যও নেওয়া হবে। পরে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে তারা সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ২০১৯ সালের পর এ বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদের কাজ শুরু হচ্ছে। এ সময় নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি, মৃতদের বাদ ও স্থানান্তরের কাজ চলবে। ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম, এমন ভোটারযোগ্য নাগরিকের তথ্য নিবন্ধনের জন্য সংগ্রহ করা হবে। ১৫-১৭ বছর বয়সিদের তথ্য সংগ্রহ হবে। ১৮ বছর বয়স হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারা ভোটার তালিকাভুক্ত হবেন। এর মধ্যে যারা ২০০৫ সালে ১ জানুয়ারির আগে জন্ম, তারা সরাসরি চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় স্থান পাবে।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা কার্যক্রম হাতে নেয় ইসি। সে সময় ৯ কোটি ভোটারের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়। ইসির সর্বশেষ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী ভোটার এবং ৪৫৪ জন হিজড়া ভোটার রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন এবার প্রাথমিক পর্যায় থেকে নির্ভুল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য কেন্দ্রে গিয়ে তথ্য যাচাই করার সুযোগ থাকছে। ইসির সহকারি সচিব মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, যেহেতু ভোটার তালিকার জন্য সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়া হয়। সে কারণে ভোটার তালিকায় কোনো ভুল হলে এনআইডিতেও ভুলটাই আসবে। তাই ভোটার তালিকা নির্ভুল রাখার জন্য এবার নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে ব্যক্তি তার তথ্য যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এদিকে শুদ্ধ ও পরিপূর্ণ ভোটার তালিকা নিশ্চিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্যদের তথ্য সংগ্রহ করে হালনাগাদেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
মন্তব্য