পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা অব্যাহত রাখতে বৃহস্পতিবার (২৬ মে) তিন জেলায় তিনটি এপিবিএন ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হয়েছে।
এই এপিবিএন ব্যাটালিয়নের হেড কোয়ার্টার থাকবে রাঙামাটিতে। ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে শান্তিচুক্তির সব ধারাও।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘তিন পার্বত্য জেলার বিশেষ আইন শৃঙ্খলা সভা’ শেষে রাত দশটার দিকে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশে ছিলেন পাহাড়ের আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।
দুই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলে এই বৈঠক। ২৫-২৭ মে রাঙামাটি ও কক্সবাজারে তিন দিনের সরকারি সফরে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বরাষ্টমন্ত্রী বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে আমি এখানে এসেছিলাম। হেডম্যান-কার্বারী, জনপ্রতিনিধি, পার্বত্য মন্ত্রী ও তিন পার্বত্য জেলার রাজাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এই এলাকার শান্তির জন্য তারা নানান ধরণের সাজেশন দিয়েছে। তাদের ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দল উপদলের মারামারি কথা বলেছেন’।
তাই এ অবস্থার উত্তরণ এবং শান্তিশৃঙ্খলার জন্যই সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্পগুলোতে পুলিশ মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্টমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শান্তিচুক্তির একটি শর্ত ছিল যে, আমাদের সেনাবাহিনীর যে পরিত্যক্ত ক্যাম্পগুলো আছে সেগুলোকে আমরা পুলিশ দ্বারা পরিপূর্ণ করবো।
যাতে করে ওই এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা অব্যাহত থাকে।
শান্তিচুক্তির সব ধারাই ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘শান্তিচুক্তি ও ভূমি কমিশন নিয়ে সন্তু লারমা দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছেন।
সবগুলোই আমরা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করবো বলে তার (সন্তু লারমা) সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে’।
প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্পে পুলিশই যথেষ্ঠ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমি তো মনে করি পুলিশই যথেষ্ঠ।
পুলিশের ওপরে আবার কী আছে? আমিতো বলছি, যেখানে যা প্রয়োজন হবে। র্যাব যদি প্রয়োজন হয় র্যাব আসবে। আরো অধিক সংখ্যক পুলিশ দরকার হলে অধিক সংখ্যক পুলিশ হবে।
আমাদের পুলিশ অত্যন্ত ক্যাপাবল। আমাদের পুলিশ এখন যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে। আমরা কিন্তু জলদস্যু ও চরমপন্থি মুক্ত করেছি।
সেই জায়গায় এখানে শান্তিশৃঙ্খলা সবার প্রচেষ্টায় আমরা প্রতিষ্ঠা করবো, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর রাঙামাটিতে ‘তিন পার্বত্য জেলার বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বৈঠক’ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর দুই বছর ৭ মাসের মাথায় ফের এ ধরনের বৈঠক করলেন তিনি।
২০১৮ সালে ৩ মে সকাল দশটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরেই রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে (৫৮) প্রতিপক্ষের অস্ত্রধারীরা গুলি করে হত্যা করে।
তিনি পাহাড়িদের আরেক আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস (এমএন লারমা) সংস্কারপন্থি দলের সহ-সভাপতি ছিলেন।
পরদিন তাঁর শেষকৃত্যে যাওয়ার সময় অস্ত্রধারীদের ব্রাশ ফায়ারে ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ দলের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাসহ (৪৫) পাঁচজন নিহত হন।
এর ধারাবাহিকতায় পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর খুন খারাবি, অপহরণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই প্রথমবারের মতো রাঙামাটিতে ‘তিন পার্বত্য জেলার বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বৈঠক’ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি, পার্বত্য টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা এমপি, জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্রি বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা), এমপি দীপংকর তালুকদার ও বাসন্তি চাকম, জননিরাপত্তা বিভাগ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, জিওসি চট্টগ্রাম, এনএসআই/ডিজিএফআই/আনসার ভিডিপি/বিজিবি/র্যাব এর মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের ডিআইজি, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ব্রিগেড কমান্ডার, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়াম্যান/জেলা প্রশাসক/সেক্টর কমান্ডার ও পুলিশ সুপার অংশ নেন।
মন্তব্য