এবার ইসির চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তিনি বলেন, ইসি যে চিঠি দিয়েছে তা এখতিয়ারবর্হিভূত। ভাষাগত দিকও ঠিক নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। যে আইন বলে ইসি চিঠি দিয়েছে তা কমিশনের নিজের করা। সংসদ সদস্যরা এই আইন করেননি বলে জানান।
আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়ি কুমিল্লা নগরের মুন্সেফবাড়ি ভবনে। তিনি কুমিল্লা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে প্রথম থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভোটকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। এ কারণে প্রথমেই ইসির পক্ষ থেকে তাকে সতর্ক করা হয়। এতে কাজ না হওয়ায় গত ৮ জুন ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে তাকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আদালতে রিট করেন। আদালতে ‘ইসির চিঠি কেন বাতিল করা হবে না সে বিষয়েও রুল জারি করেন। রুল নিষ্পত্তির মধ্যেই বুধবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। কিন্তু ইসির আদেশ পাওয়ার পরও এমপি বাহারের এলাকা ত্যাগ না করায় শুরু হয় সমালোচনা। অনেকে ইসির সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এরই মধ্যে বুধবার নির্বাচনের দিন বেলা ১১টায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের আইন মানতে হবে। আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, আমি আইন প্রণেতা হয়ে আইন ভঙ্গ করেছি। আমাকে কোথাও দেখেছেন নির্বাচনে?’
গত ৮ জুন ইসির চিঠিতেও উল্লেখ করা হয় কুমিল্লা-৬ নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এ অবস্থায়, অনতিবিলম্বে আপনাকে উল্লিখিত নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করে আচরণবিধি প্রতিপালন বিষয়ে কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে শুধু ভোট দিতেই নির্ধারিত কেন্দ্রে যেতে পারেন।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধিমালা-২০১৬-এর ২২ বিধিতে বলা আছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচনপূর্ব নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। আর এ বিধিমালায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাঁদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র। বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরূপ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তাঁর ভোট প্রদানের জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন।
বাহাউদ্দিন অভিযোগ করেছেন, ইসি যে চিঠি দিয়েছে তার ভাষা ঠিক ছিল না এবং তা এখতিয়ারবহির্ভূত। একজন জাতীয় সংসদ সদস্যকে এভাবে নির্দেশ শব্দ ব্যবহার করতে পারে না। চিঠিটা অসমাপ্ত ছিল। আইনের পুরো ব্যাখ্যা ছিল না। আইনটি নিয়ে সংসদে কথা বলবেন বলে জানান এবং তা সংশোধন করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, যাঁরা হলুদ সাংবাদিকতা করেন, তাঁরা এই চিঠি নিয়ে তাঁকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেছেন। আইন অনুযায়ী, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। আমি সরকারের অংশ নই। আমি জাতীয় সংসদের অংশ। আমাকে এই আইনের আওতায় আটকে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তবে চিঠিটি কুমিল্লার নির্বাচনকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিঠির কারণে কুমিল্লার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে ভোট দেবেন।
এ সময় তিনি বলেন, কুমিল্লায় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। কোথাও গণ্ডগোল নেই, ঝামেলা নেই। অতি উৎসাহী কোনো কর্মকর্তা যেন পরিবেশ নষ্ট না করেন। প্রার্থী, সমর্থক উৎসবমুখর পরিবেশে আছে। ১০-১২ জন ছেলেপেলে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকলে অতি উৎসাহী কোনো কর্মকর্তা যেন তাদের হেনস্তা না করেন। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তারা কাজে নামবে। কিছু জায়গায় ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি অভিযোগও করেন। বলেন, ভোটার আইডি নিয়ে গেছেন কিন্তু স্লিপ নিয়ে যাননি। তাই ভোট দিতে দেয়নি। ভোটারের চিঠি তো ভোটের অংশ না। ম্যাজিস্ট্রেট আইডি আটকে রেখেছেন। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সফল করতে তাঁরা যেন সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন এবং নৌকাই বিজয়ী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
মন্তব্য