-->
শিরোনাম
অর্থনৈতিক ও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক

দুই হাজার ১৯৪ কোটি টাকার ১৩ প্রস্তাব অনুমোদন

# ঢাকায় যাদের জমি-ফ্ল্যাট আছে সবাই কালো টাকার মালিক: অর্থমন্ত্রী # টিসিবির জন্য সাড়ে ২৮ হাজার টন চিনি-ডাল কিনবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই হাজার ১৯৪ কোটি টাকার ১৩ প্রস্তাব অনুমোদন

অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে দুই হাজার ১৯৪ কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩০ টাকার ১৩ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ২৮ হাজার ৫০০ টন চিনি ও মসুর ডাল কেনার পৃথক দুটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

বুধবার (১৫ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি অর্থনৈতিক ও ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রী ভার্চুয়ালি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থনৈতিক কমিটির অনুমোদনের জন্য একটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৭টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের চারটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তিনটি, স্থানীয় সরকার বিভাগের দুটি, জননিরাপত্তা বিভাগের দুটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি, সেতু বিভাগের একটি, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবনা ছিল। এর মধ্যে ক্রয় কমিটি ১৩টি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।

তিনি আরো জানান, অনুমোদিত প্রস্তাবের মোট অর্থের পরিমাণ দুই হাজার ১৯৪ কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩০ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৬৭৩ কোটি ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৬৮২ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ও বৈদেশিক অর্থায়ন এক হাজার ৫২১ কোটি ৩০ লাখ ৭৬ হাজার ১৪৮ টাকা।

টিসিবির জন্য সাড়ে ২৮ হাজার টন চিনি-ডাল কিনবে সরকার

টিসিবির জন্য দেশের আট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২৮ হাজার ৫০০ টন চিনি ও মসুর ডাল কেনার পৃথক দুটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড এবং সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে ১৫ হাজার টন চিনি কিনতে ১২৩ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, টিসিবির অন্য এক প্রস্তাবে এসিআই পিওর ফ্লাওয়ার লিমিটেড, সেনাকল্যাণ সংস্থা, এনএস কনস্ট্রাকশন, বাংলাদেশ ভোজ্যতেল লিমিটেড, নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড এবং ইজ সার্ভিসেস লিমিটেডের কাছ থেকে ১৩ হাজার ৫০০ টন মসুর ডাল সর্বমোট ১৫৮ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অনুমোদিত অন্য প্রস্তাবগুলো হচ্ছে:

বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, কুমিল্লা জোন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর জিডি-১: লট-৪ এর আওতায় টার্নকিভিত্তিতে একটি নতুন সাবস্টেশন স্থাপন এবং ছয়টি সাবস্টেশনের মানোন্নয়নের পূর্তকাজ যৌথভাবে বাংলাদেশের এলইইসি এবং এডিইএক্স’র কাছ থেকে ১৬০ কোটি ৬৫ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩১ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি’ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণের পূর্তকাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে টিসিএল এবং এনডিই’র ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২৯ কোটি ৪৭ লাখ ৭১ হাজার ৯০১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ‘শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যা হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় ছয়তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের পূর্তকাজ যৌথভাবে এনডিই এবং ইউসিসির ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১৭ কোটি ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫৩৯ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ঢাকায় যাদের জমি-ফ্ল্যাট আছে সবাই কালো টাকার মালিক: অর্থমন্ত্রী

ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা আরো বলেন, ঢাকা শহরে যাদের জায়গা-জমি বা ফ্ল্যাট আছে তারা সবাই ‘কালো টাকার মালিক’। আর এই অবস্থার জন্য সরকার এবং সিস্টেমই দায়ী।

তিনি বলেন, গুলশান এলাকায় কেনা কোনো জমির যে দাম দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়, প্রকৃত ক্ষেত্রে জমির দাম তার থেকেও অনেক বেশি। কিন্তু বেশি দামে তো রেজিস্ট্রি করতে পারবেন না। কারণ, প্রতিটি মৌজার জন্য দাম নির্ধারণ করে দেওয়া আছে, তার বেশি দামে রেজিস্ট্রি করা যাবে না। তাই যা পারা যাবে না, কালো টাকা তো সেখানেই হয়ে গেছে। তাহলে কে কালো টাকার বাইরে রয়েছে? তিনি বলেন, এ জন্য সরকার দায়ী। আমিও একসময় দায়িত্বে ছিলাম। আর ঢাকা শহরে জমির মূল্য বৃদ্ধি করা যায় কিনা, তা নিয়ে চিন্তা করলেও শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। যে দাম ছিল বরং সেই দামই রয়েছে।

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপের বিষয়ে কোনো চাপে রয়েছেন কি নাÑ সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি কোনো চাপে নেই, যা বলেছি তা করব। আমি কখনো অর্ধেক রাস্তা থেকে সরে আসি না। রেমিট্যান্সের ওপর যখন প্রণোদনা দিয়েছি, তখন অনেক সমালোচনা হয়েছে। সেই সময় বলা হয়েছিল, টাকা আসবে না, টাকা পাচার হবে। কিন্তু এর বিপরীত হয়েছে, টাকা এসেছে। কেবল টাকা আসেইনি, ঐতিহাসিক রেকর্ডও হয়েছে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে যখন ফেরত আসবে, আমরা মনে করি তখন সেই অর্থের একটি অংশ পুঁজিবাজারে এবং বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ হবে। এ প্রত্যাশায় আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি।

কালো টাকার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, যখন বিদেশ পাচার হওয়া কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি সেই সময় বলা হচ্ছে, সরকার নাকি কালো টাকাকে সাদা করার প্রশ্রয় দিচ্ছে। আমি অপ্রদর্শিত টাকা বলি। এখানে তো লাজ-লজ্জার কিছু নেই।

পুঁজিবাজারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে। পুঁজিবাজারে দর উঠানামা স্বাভাবিক নিয়ম, তবে এটি ভালোভাবে চলুক সেটি আমাদের সবার চাহিদা।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে বাজেট যেটি ঘোষণা করলাম সেটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। এটি বাস্তবায়ন শুরু হবে আরো পরে। পুরো বাজেটে পুঁজিবাজারের অনেক কিছু আছে। আমাদের অর্থনীতি অনেক ভালোভাবে চলছে। বিশ্বের মধ্যে তুলনা করলে প্রত্যেকটি ধারায় আমরা অনেক ভালো আছি।

মন্তব্য

Beta version