-->
শিরোনাম
অসহায় মানুষের পাশে

বন্যায় তাৎক্ষনিক সাড়া দিল রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক
বন্যায় তাৎক্ষনিক সাড়া দিল রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন

বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে মানুষ দিশেহারা। নতুন করে নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটেও হানা দিয়েছে। হঠাৎ বন্যায় এসব জেলায় অসহায় মানুষের সাহায্যে স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি তাৎক্ষনিক সাড়া দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় পার্টি ও ইসলামপন্থি বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিলেট জেলা ও মহানগর, বিভিন্ন পৌর আওয়ামীলীগ ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ত্রান বিতরণ করা হচ্ছে।

এদিকে, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়স্থ ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির দপ্তরে এই বৈঠক হয়েছে।

বৈঠক শেষে আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী জানান, সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বন্যার্তদের জন্যে ৬০০ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার্তদের উদ্ধার করে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি ও আওয়ামী লীগ পরিবার।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত নারী পুরুষ ও শিশুদের রক্ষায় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে নৌকা, ওরস্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও শুকনো খাবারসহ অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী সামগ্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়ে সহযোগিতা দিতে বেশকিছু কমিটি গঠন করা হয়। আক্রান্ত উপজেলাতে দ্রুততম সময়ে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির টিম সাহায্য নিয়ে যাবে। পাশাপাশি এই প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি ও সংগঠন পর্যায়ে সকল সামর্থ্যবানদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। এসময় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের এমপি সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে লাখ লাখ মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। কোথাও কোথাও খাদ্যসংকট প্রকট হয়ে উঠছে। বানভাসি মানুষের কষ্ট লাঘবে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বন্যার্তদের সার্বিক সহায়তা করতে জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বন্যার্তদের সহায়তায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বিএনপির জেষ্ঠ্য যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন- ইতিমধ্যে তাদের দলের পক্ষ থেকে বন্যার্ত এলাকায় মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আপপাশের জেলাসমূহের নেতাকর্মীদের এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। বিএনপি গণমানুষের দল। তাই এই বিপদে সর্বোচ্চভাবে বিএনপি জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।

সরকার সমর্থক কয়েকজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সিলেটে বন্যার্তদের সহায়তার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। আগামীকাল সোমবার থেকে প্রাথমিকভাবে ৫০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার হবে। পত্যেকের জন্য প্রতি প্যাকেটে থাকবে ৬কেজি চাল, ১কেজি চিড়া, ১ প্যাকেট বড় পাউরুটি, ২ প্যাকেট বিস্কুট, স্যালাইন ৫ প্যাকেট, মিনারেল ওয়াটার ৩ লিটার। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান জামাল, গাজীপুর মহানগর যুবলীগ আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, ফেনী জেলার এসপি, মেরিন গ্রুপের পরিচালক ও জননী ফুডস ইন্ডাস্ট্রির আব্দুল মান্নান সাদিক যৌথভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা সমাজের বিত্তবানদের বন্যার্তদের সাহায্যার্থেূ এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বন্যা মোকাবিলায় ৫২ হাজার পরিবারকে জরুরি সহায়তা দিতে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। একইসঙ্গে বিত্তবান সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্র্যাকের মিডিয়া অ্যান্ড এক্সটারনাল রিলেশন কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান রাফে সাদনান আদেল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে শুকনো খাবার, খাবার পানি, স্যালাইন, দিয়াশালাই, মোমবাতি, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অন্যান্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি বন্যায় আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতেও এ অর্থ ব্যয় করা হবে। ‘ডাকছে আমার দেশ’ মাধ্যমে অর্থ সহায়তার বিস্তারিত জানতে https://brac.net/dakcheamardesh/ এ ঠিকানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

বন্যার্তদের সাহায্যে খাদ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বেসরকারি সংস্থা বিদ্যানন্দ। বিদ্যানন্দ সূত্রে জানা যায়, বন্যাদুর্গত সিলেট জেলায় তাদের চারটি টিম কাজ করছে। সেখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে মূলত শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণের কাজ করছে বিদ্যানন্দ। শুকনো খাবারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ১ কেজি মুড়ি, ৫০০ গ্রাম চিড়া ও গুড় দেওয়া হচ্ছে। সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১ হাজার পরিবারকে প্রতিদিন রান্না করা খাবার বিতরণের প্রস্তুতি নিয়েছে সংগঠনটি।

 

মন্তব্য

Beta version