চির নিদ্রায় শায়িত সাবেক সচিব, কূটনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট কলামিস্ট মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর তৃতীয় জানাজা শেষে ফেনীতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সোমবার (২০ জুন) বার্ধক্যজনিত নানান জটিলতার কারণে উত্তরার বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
মহিউদ্দিন আহমদের প্রথম জানাজা উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় জানাজা ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়। এর পরেই ফেনীর উদ্দেশ তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জানাজা শেষে মরহুম মহিউদ্দিন আহমদের মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীরবিক্রম।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন।
এছাড়া ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশনের পক্ষ হতেও ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।
বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সিলেটে যাওয়ায় জানাজায় অংশ নিতে পারেননি।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইউরোপে পাকিস্তান দূতাবাসগুলোতে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিবিদদের মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম বাঙালি কূটনীতিবিদ হিসেবে লন্ডনের পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারির পদ ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন।
দেশের জন্য কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন এবং আমৃত্যু তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে সরব ছিলেন। দেশের জন্য তাঁর অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। সত্য বলতে কখনও দ্বিধাবোধ করতেন না। খুব জ্ঞানী ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, মহিউদ্দিন আহমেদ সত্যভাষী হওয়ার ফলে তাকে অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। বিদেশে থেকে প্রথম দিকটাতে যুদ্ধে যোগ দেওয়াদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
মহিউদ্দিন আহমেদ এর ছোট ভাই ড. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি সব সময় মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন এবং মানুষের প্রতি তার ভালোবাসাটা ছিল প্রবল। তিনিই আমাদের পুরো পরিবারকে দেখভাল করেছেন।
সাবেক সচিব, কূটনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট কলামিস্ট মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ইউরোপের পাকিস্তান দূতাবাসগুলোতে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকদের মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেন। ১৯৭১ সালে তিনি লন্ডনের পাকিস্তান হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিবের পদ ছেড়ে দিয়ে যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন।
তার জন্ম ১৯৪২ সালের ১৯ জুন ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় নূরপুর গ্রামে। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর ভর্তি হন ফেনী কলেজে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে অনার্স পাসের পর বৃত্তি নিয়ে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সেখানে মাস্টার্স সম্পন্ন করে দেশে ফেরেন।
মন্তব্য