-->

আগামীকাল অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামীকাল অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী

উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌশলী , স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর) পাওয়া ব্যক্তিত্ব এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপির পিতা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৮ অক্টোবর। ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর এই মহান ব্যক্তিত্ব মৃত্যুবরণ করেন।

 

মরহুম সিরাজুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এবং আখাউড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে মিলাদ, দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

 

মরহুম সিরাজুল হকের পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলাতে হলেও পিতার কর্মসূত্রে তিনি ১৯২৫ সালের পহেলা আগস্ট সাতক্ষীরা জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। 

 

মরহুম সিরাজুল হক মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনসহ স্বাধিকার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেন। মরহুম সিরাজুল হক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সহচর। বঙ্গবন্ধু ও মরহুম সিরাজুল হক কলকাতায় একজন ইসলামিয়া কলেজে এবং অন্যজন প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তেন এবং এক সঙ্গে বেকার হোস্টেলে থাকতেন। 

 

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন কসবা-বুড়িচং নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে এমএনএ নির্বাচিত হন। 

 

বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে মরহুম সিরাজুল হক আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতপূর্বক মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান এবং সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করেন। 

 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে বাংলাদেশের যে প্রতিনিধিদল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির সাথে দেখা করেন তার অন্যতম সদস্য ছিলেন মরহুম সিরাজুল হক।

 

১৯৭২ সালে গঠিত গণপরিষদের সংবিধান কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন মরহুম সিরাজুল হক। তিনি ১৯৭৩ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কসবা ও আখাউড়া নিয়ে গঠিত তৎকালীন কুমিল্লা-৪ (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৪ কসবা-আখাউড়া) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 

 

১৯৭৫ সালের অক্টোবরে বঙ্গভবনে খন্দকার মোশতাক তৎকালীন এমপিদের নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করেন। উক্ত বৈঠকে মরহুম সিরাজুল হক প্রথম ব্যক্তি হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং খন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতি বলা যায় না মর্মে দ্বিধাহীন চিত্তে ঘোষণা করেন।

 

মরহুম সিরাজুল হক উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করেন। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং তদপরবর্তীতে সিনিয়র আইনজীবী হিসাবে সনদ লাভ করেন। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ ১৯৫৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে তার বেশির ভাগেরই আইনজীবী ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এসময় সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোয় ১৯৮২ সালের ১০ অক্টোবর তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং জেল হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ঈযরবভ ঝঢ়বপরধষ চৎড়ংবপঁঃড়ৎ ছিলেন।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মরহুম সিরাজুল হককে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) ২০২২ প্রদান করা হয়।  

 

ব্যক্তিগত জীবনে জনাব সিরাজুল হক বেগম জাহানারা হক এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন দুই পুত্র ও এক কন্যার জনক। বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক তাঁর বড় পুত্র। সিরাজুল হকের অপর দুই সন্তান সায়মা ইসলাম এবং আরিফুল হক রনি এরইমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। সিরাজুল হকের সহধর্মিণী বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম জাহানারা হক ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তাঁকেও বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version