বাজারে কাগজ-কলমে আরো এক দফা বাড়ছে চিনির দাম। আগামী ফেব্রুয়ারী মাস থেকে নতুন করে প্রতি কেজি চিনিতে দাম বাড়বে পাঁচ টাকা। এতে এক কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু জানুয়ারিতেই বাড়তি দামে চিনি বিক্রি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকার কমে মিলছে না।
সবশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা থেকে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা এবং খোলা চিনির দাম বাড়িয়ে করা হয় ১০২ টাকা। সেক্ষেত্রেও চিনি বিক্রি হয়েছে বাড়তি দামে। নতুন করে দাম বাড়ায় চিনির বাজার লাগামছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীদের।
রাজধানীর প্রধান বাজারগুলো ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। খিলগাঁও বাজারের খুচরা চিনি বিক্রেতা সামিউল বলেন, আগেও নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি হয়নি। এখন নতুন করে দাম বেড়েছে। এ ঘোষণার পর থেকে সরবরাহ কম। বোঝা যাচ্ছে না পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, চিনি নিয়ে অস্থিরতা দীর্ঘদিন ধরে। সরকার কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে না বলে খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শুধু চিনি নয়, মসলাসহ আদা-রসুন ও শুকনো মরিচের দামেও অস্থিরতা চলছে। সপ্তাহান্তেই বাড়ছে দাম।
এখন প্রতি কেজি আদা ১৫০-২০০ টাকায় ঠেকেছে। রসুনের দামও বেড়ে হয়েছে ১৫০-১৮০ টাকা। বাজারে তুলনামূলক কিছুটা কম দামে দেশি জাতের আদা-রসুন থাকলেও সেগুলোর চাহিদা কম। আগে যে শুকনো মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হতো ১০০-১৫০ টাকায়, তা এখন ৫০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন সংকটে পণ্যটির রেকর্ড পরিমাণ দাম বেড়েছে। বর্তমানে শুকনো মরিচ কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ৩৫০-৫০০ টাকায় ওঠানামা করছে। আসন্ন রমজানের আগে সরবরাহ না বাড়লে দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে আমদানি করা ভারতীয় মরিচ বিক্রি হচ্ছে (গুজরাটি) ৩২০-৩৭০ টাকায়। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা মরিচের কেজি ৩৫০-৩৭০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় পরে মরিচের দাম এতটা বেড়েছে। বাজারে এ তিন মসলা পণ্যের দামের হেরফেরের বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যেও। সংস্থাটি বলছে, গত বছর একই সময়ে দেশে আদার দাম মানভেদে ৫০-১১০ শতাংশ, রসুনের দাম ৪৫-১২৭ শতাংশ এবং শুকনো মরিচের দাম ৭৫-১৫২ শতাংশ কম ছিল।
এদিকে বাজারে দুই সপ্তাহ আগে সরু চালের দাম বেড়েছে। সঙ্গে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। স্বস্তি নেই এখন শীতের সবজিতেও। প্রায় প্রতিটি পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের থেকে ৫-১০ টাকা বেশিতে। আজো এসব পণ্যের দাম বাড়তি দেখা গেছে। বাজারভেদে সরু মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের বিআর২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়। ভালো মানের নাজিরশাইল চালের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। আর মোটা চাল ৫৪-৫৫ টাকা কেজি।
অন্যদিকে শীত মৌসুম শেষ না হলেও বাজারে দাম চড়া মৌসুমি সবজির। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ঘাটতির কথা বললেও বাস্তবে তেমনটি দেখা যায়নি। বরং বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহের চিত্রই দেখা গেছে। এরই মধ্যে কেজিতে দাম বেড়ে গেছে ১০ টাকা পর্যন্ত। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে প্রতি কেজি ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ডিমের দামে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। কোনো কোনো এলাকায় প্রতি ডজন (১২ পিস) ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। তবে নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে এ দাম ১২৫ টাকা দেখা গেছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য