প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে অবান্তর বিতর্ক সৃষ্টি অনাবশ্যক। যা সীমিচিন নয়। কেননা, যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি আদালতের রায় অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদে অবৈধ নন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক দুর্নীতি দমন কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন সিইসি। দুদক আইনে কমিশনার কর্মবসানের পর প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ পাবেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ নিয়েই বিভিন্ন মহল থেকে মো. সাহাবুদ্দিন-এর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর বুধবার হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডাকে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সামনে এসে সিইসি তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি আজকে আপনাদের মাধ্যমে কিছু বক্তব্য রাখবো। বিষয়টি সাম্প্রতিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গ। বিগত ১২ ফেব্রুয়ারি আমরা রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পেয়েছিলাম।
দু’জন সংসদ সদস্য প্রস্তাব ও সমর্থন করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি প্রার্থী তাদের সম্মত হয়ে তার স্টেটম্যান দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী আপনারা জানেন সংবিধান, আইন ও বিধি অনুযায়ী এ নির্বাচনটি পরিচালনা করতে হয়। আমরা তফসিল দিয়েছিলাম। তফসিল অনুযায়ী ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ছিল। ১৩ ফেব্রুয়ারি ছিল বাছাইয়ের দিন। বাছাইয়ের কাজটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার তথা ‘নির্বাচনি কর্তা’ একক ও অবিভাজ্য।
এটা কমিশনের কোনো দায়িত্ব ছিল না। দায়, দায়িত্ব, ভুল, ভ্রান্তি, দায়ভার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এককভাবে নিতে হবে। সে জন্যই যেহেতু বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর একক ও অবিভাজ্য দায়িত্ব ছিল তাই আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাম নির্বাচনি কর্তা হিসেবে কিছু কিছু উত্থাপিত প্রশ্নে বিভ্রান্তি নিরসনের সুবিধার্থে কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করা আবশ্যক মনে করছি।
সিইসি বলেন, একটি প্রশ্ন ওঠেছে যে প্রার্থীর সাংবিধানিক বা আইনগত অযোগ্যতা রয়েছে। এটা সত্য যে দুদক আইনের ৯ ধারায় বলা হয়েছে, যে কর্মবসানের পর কোনো কমিশনার প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। এটা আছে। এটার আলোকে বিষয়টি বিবেচ্য। এতে করে অনেকেই বলতে চেয়েছেন রাষ্ট্রপতির পদটি লাভজনক পদ।
আমি সিইসি এবং নির্বাচনি কর্তা হিসেবে ওই আইনটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলাম। কারণ পরীক্ষা করার সময় যেটাকে মনোনয়নপত্র বাছাই বলে, সেখানে কিন্তু দায়সারাভাবে দায়িত্ব নয়। সিইসিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে প্রার্থী যাই বলুক না কেন কমিশনারেরও দায়িত্ব আছে পরীক্ষা করে দেখা যে কোনোরূপ সাংবিধানিক বা আইনগত অযোগ্যতা আছে কিনা।
আমরা দেখলাম প্রথমত, স্পষ্টত কোনো আইনগত অযোগ্যতা নেই। সাবেক এ জজ বলেন, দুদক আইনের ৯ ধারায় বলেছে কোনো লাভজনক পদে নিয়োগলাভে যোগ্য হবেন না। আমরা কিন্তু এখান থেকে কোনো নিযোগদান করিনি। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগদান করেননি। প্রধান বিচারপতিও নিয়োগদান করেননি। কেউ নিয়োগদান করেননি। এবং কেউ নিয়োগদান করতে পারেন না।
তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা তাকে নির্বাচিত করেছি প্রচলিত প্রথা অনুসারে। এবং নির্বাচন ও নিয়োগের মধ্যে যে পার্থক্য এটা বুঝতে হবে। এটাকে আলোচনায় না এনে তাকে লাভজনক পদে বসানো হয়েছে বা হতে যাচ্ছে। আমাদেরকে অবশ্যই নির্বাচন ও নিয়োগের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। তাকে যদি এখান থেকে নিয়োগ দেওয়া হতো তাহলে অবশ্যই অবৈধ হতো।
কারণ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা কর্তৃত্ব আমাদের নেই। কারোরই নেই। যেমন আমাদের জাতীয় সংসদের সদস্যগণ নিয়োগপ্রাপ্ত হন না। তারা নির্বাচিত হন, সেটাই তাদের নিয়োগের সমতুল্য। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি কিন্তু ১৯৯৬ সালে একটি মামলা হয়েছিল যখন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ যখন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অফিস গ্রহণের আগেই আবু বকর সিদ্দিক ভারর্সেস অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন মামলা হয়েছিল। সেই রিট মামলায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
মামলায় যে অপারেটিভ পোর্শন সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পূর্ণ বৈধ। এতে কোনো অবৈধতা হয়নি। আলোচনায় তিনি (আদালত) বলেছেন এ পদটি অফিস অব প্রোফিট হলেও তিনি প্রজতন্ত্রের কর্মচারী নন। সেখানে কোন পদগুলো লাভজনক এবং কোন পদগুলো সাংবিধানিক পদ, সেগুলো আলাদা করে দেখানো হয়েছিল।
আমরা সে প্রশ্নে না গিয়ে যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের চূড়ান্ত একটি রায় বলে দিয়েছে যে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, ঠিক তেমনি অবসরপ্রাপ্ত কমিশানের নিয়ম। তাই রাষ্ট্রপতি পদে অনুরূপভাবেই (সাবেক দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন) অবৈধ নয়। সে দিক থেকে এ প্রশ্নে বিভ্রান্তির সৃষ্টি বিভিন্ন ধরনের মতামত দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি অনাবশ্যক বা সমীচীন হবে না বলে আমি মনে করি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, আমাকে দেখতে হবে আইনের কোথায় কী বলেছে। এটা হচ্ছে সংবিধিবদ্ধ একটি অযোগ্যতা যে কর্মাবসানের পদে তিনি কোনো পদে নিয়োগ লাভ করবেন না। নির্বাচন ও নিয়োগ এক জিনিস নয়। একটি মানুষ যখন নির্বাচিত হন তার চরিত্র একটি আর যখন নিয়োগপ্রাপ্ত হন তখন চরিত্র আরেকটি। উনি নির্বাচিত হয়েছেন পরোক্ষভাবে পুরো দেশবাসীর পক্ষে, আর প্রত্যক্ষভাবে জাতীয় সংসদের সদস্যদের দ্বারা।
যেহেতু একজন মাত্রা প্রার্থী ছিলেন এবং দু’টো মনোনয়নপত্র ছিল। আমি নির্বাচনী কর্তা হিসেবে বিবেচনা করেছি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং এর বাইরেও প্রচলিত যে আইন কানুন সংবিধানের ৬৬ ও ১৪৭ অনুচ্ছেদ এবং সে রায় বিবেচনায় করে দেখেছি এ পদে তার নির্বাচনে কোনো ধরনের অযোগ্যতা নেই। কাজেই সেই জিনিসটা আমি আপনাদের মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করতে চাচ্ছি যে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির প্রশ্নে যদি কোনো ধরনের অবান্তর বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়, সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত।
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন নিয়োগপ্রাপ্ত নন। এটি পুরোপুরি লিগ্যাল বলেছে। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ওই পদে নিয়োগলাভের যোগ্য হবো না। আমাদের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্মবসানের পর প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে নিয়োগ পেতে পারবেন না।
আমি নির্বাচন করতে পারবো। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আদালতের কথা না, আমার ব্যক্তিগত মত। আমি নিয়োগের অযোগ্য হতে পারি তবে নির্বাচনের অযোগ্য নই। রাষ্টপতি ও এমপি নির্বাচন করতে পারবো বলে মনে করি। তিনি আরও বলেন, সংবিধানে লাভজনক পদের ব্যাখ্যা নেই। তবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
যেহেতু ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি শুধু আমাদের দেশে নয় ভারত বা অন্যান্য দেশেও এ বিষয়টা নিয়ে অফিস অফ প্রফিট নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণে বিভিন্ন জায়গায় বিভাজন করে করে কোন পদগুলো লাভজনক বলে গণ্য হবে, কোনগুলো গণ্য হবে না এ জিনিসটি হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য