-->

সবজি নমনীয়, ফিরছে স্বস্তি

হেলাল সাজওয়াল
সবজি নমনীয়, ফিরছে স্বস্তি

দীর্ঘ দিনের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, সিন্ডিকেট ভাঙার লক্ষ্যে সরকার নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। এর কিছুটা প্রভাব বাজারে পড়েছে। সবজির দাম কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। ফলে সবজিতে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু অন্য পণ্যের দাম ওঠানামা করছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ওয়ারী ও বংশাল এলাকায় একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, মাসখানেকের মধ্যে উত্তাপ আরও কমে আসবে। গতকাল প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয় ৭০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এ ছাড়া পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা; কচুরমুখী ৬০ টাকা, শিম ১২০টাকা, শসা ৫০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজিতে দাম কমেছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। কাঁচা মরিচের দাম অর্ধেক কমে বিক্রি হয় ২০০-২২০ টাকায়।

দয়াগঞ্জ বাজারে শাহীন মিয়া বলেন, বাজারে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। তবে সরকার মনিটরিং বজায় রাখলে বাজার নাগালে রাখা সম্ভব হবে। আরেকটু দাম কমলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। কমার পরেও এখন যে দাম সেটা আসলে কম নয়; বাড়তি দাম কমেছে। সবজির কত দাম হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ, প্রতিদিন মাছ-মাংস খাই না। শাকসবজি খেয়েই বাঁচি, এগুলোর দাম বেশি থাকলে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

মো. কবির হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, মাসখানেক ধরে দেখছি বাজার চড়া, সব সরকারের আমলেই মাঝে মধ্যে নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন হয়েছে। কেউই কিছু করতে পারেনি। সিন্ডিকেটের কাছে হার মেনেছে। কিন্তু এই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা একটু বেশি। যদিও প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকার এখনও কিছুই করতে পারেনি। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত বাজারে তদারকি বাড়ানো এবং যেকোনো মূল্যে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা।

এদিকে, বাজারে সবজির দাম কমলেও মাছ-মুরগি-মাংসের বাজার দীর্ঘদিন ধরে বাড়তিই থেকে যাচ্ছে। ক্রেতাদের মতে, বাজারের অস্থিরতা কাটছে না কোনোভাবেই। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ফিডের দাম বৃদ্ধির পর থেকেই মাছ-মুরগি-মাংসের বাজার বাড়তি যাচ্ছে, যা আর কমেনি। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩৩০ টাকা, কক ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, দেশি মুরগি আগের মতো ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১০০০-১১০০ টাকায় বিক্রি হয়। বাজারে প্রতি কেজি চাষের কই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, রুই ৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০-২৪০ টাকা, কাতল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ১১০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০ টাকা, রুপচাঁদা ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, শিং ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, চাপিলা ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। পরিবর্তন নেই আলু-পেঁয়াজের বাজারে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৬০ টাকায়, দেশি পেঁয়াজ ১২০-১৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়। ফার্মের মুরগির ডিম (বাদামি ও সাদা) ডজনপ্রতি বিক্রি হয় ১৫০-১৬০ টাকায় গত সপ্তাহে যা ছিল ১৮০-১৯০ টাকা।

মিরপুর-৬ পাইকারি বাজারের মাছ বিক্রেতা নেকিব হাসান বলেন, মূলত মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধির পর থেকে বাজারে মাছের দাম বাড়তি। তা ছাড়া কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেশি। জনৈক খুচরা বিক্রেতা বলেন, আমরা কম দামে পাইকারি বাজার থেকে মাছ কিনতে পারলে, কম দামে বিক্রি করতে পারব। আমাদের কেনা যেমন দামে বিক্রিও তেমন দামে করতে হয়।

বাজারে ডিম-সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও চালের দাম বৃদ্ধির কারণে সেই স্বস্তি আর থাকছে না। ১৫ দিনের ব্যবধানে মোটা, মাঝারি ও সরু- প্রায় সব ধরনের চালের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধিতে মাসের বাজারের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের।

বাবু বাজার এলাকায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ইয়াসিন মাঝি নামের একজন শ্রমিকের। স্বল্প আয়ের এই কর্মজীবী ভোরের আকাশকে জানান, তিনি সাধারণত ইরি-২৮ কিংবা মোটা পাইজম চাল কেনেন। আগে এ ধরনের চালের দাম ছিল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। এখন কিনতে হচ্ছে ৬৫ টাকায়। তিনি মনে করেন, বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। বাবু বাজারের পাইকারি চাউলের দোকানে প্রতিকেজি মোটা দানার স্বর্ণা পাইজম চাল পাইকারি বিক্রি হয় ৫০-৫৪ টাকায়। মাঝারি ব্রি-২৮ এর ৫৮-৬০ টাকা কেজি এবং সরু দানার মিনিকেট ৬৪-৭৬ টাকা; নাজিরশাইল চাল ৬৬-৭৬ টাকা এবং বাসমতি চাল ৮৭-৯২ টাকায় বিক্রি হয়।

বাবুবাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা মেসার্স ফেমাস রাইস এজেন্সির মালিক জালাল উদ্দিন পাঠান বলেন, যারা চাল সরবরাহ করে তারাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজারে গত সপ্তাহে ৫০ কেজি চালের দাম বস্তায় ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে খুচরা পর্যায়ে তো দাম বাড়বেই। আমরা মুনাফা করার জন্যই তো ব্যবসা করি। তিনি বলেন, যখন থেকে করপোরেট কোম্পানিগুলো চালের ব্যবসায় প্রবেশ করে তখন থেকেই নিয়ন্ত্রণহীন বাজার। তিনি জানান, আগে ফরিয়ারা আমাদের কাছে টাকা পাওনা থাকতো আর এখন আমরা ৭ দিন আগে টাকা জমা দিয়ে ৭ দিন পর চাল পাই। বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে চালের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছ, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version