বরমী বাজার দখলেও চলছে মহোৎস
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৩৭ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
গাজীপুরের শ্রীপুরের বন্দরখ্যাত বরমীর বানার নদী ও তার তীরবর্তী বরমী বাজারঘেঁষা সরকারি জমি দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক বহুতল ভবন। বাজারেই রয়েছে ইউনিয়ন ভূমি অফিস।তারপরও কিভাবে দখল হচ্ছে সেই প্রশ্ন আসছে ঘুরেফিরে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের দুর্বল নজরদারি এবং প্রভাবশালী দখলদারদের প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরেই একেরপর এক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে।
ভূমি অফিসের তথ্য মতে, বরমী বাজার সংলগ্ন বানার নদীর তীর ছাড়াও বাজার এলাকাজুড়ে প্রায় ৭ একর সরকারি খাসজমি রয়েছে। আইন অনুযায়ী নদীর জায়গায় স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একইভাবে, বরমী বাজার এক বছরের লিজে পরিচালিত হওয়ায় সেখানে শুধুমাত্র অস্থায়ী দোকানপাট স্থাপনের অনুমতি রয়েছে, যেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কোনো বিধান নেই।
কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। স্থানীয়রা জানায়, নদী ও বাজারের জায়গা দখল করে প্রভাবশালীরা চাইলে যা খুশি তাই করছে। দখলদারদের দৌরাত্ম্যে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বরমী বাজার এখন অস্তিত্ব সংকটে।
নদীর দুই পাশে গড়ে উঠেছে অন্তত ২০ টির বেশি অবৈধ বহুতল ভবন। বাজারের জায়গাতেও অর্ধশতাধিক স্থায়ী স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। এতে বাজারের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে, যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে, আর নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বরমী কলেজের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ বলেন, “বানার নদী আমাদের এলাকার প্রাণ, আর বরমী বাজার শত বছরের ঐতিহ্য। অথচ দুটিই চোখের সামনে দখল হয়ে যাচ্ছে। শত কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী দখলদাররা।”
বরমী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী রুহুল আমিন জানায়, আগে যেখানে ছাপড়া করে ব্যাবসা করতাম সেখানে এখন পাকা ভবন,সিকিউরিটি দিয়ে ব্যাবসা করতে হয়।প্রভাবশালীরা একের পর এক বিল্ডিং করছে। বাজারেই আছে ভূমি অফিস তারা কেনো বাঁধা দেয় না?
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, “নদীর দুই পাশ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে স্থাপনা করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু বরমীতে আইন যেন অকার্যকর। অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগে বহুতল ভবন পর্যন্ত গড়ে উঠেছে। দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করলে নদী বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
বরমী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা দেলোয়ারা বেগম জানান, নদী দখল করে স্থাপনা করায় অরূপ নামে একজনকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। বিগত ১৬ বছরে বাজারের জায়গাতেও বহু বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। অনেক দখলদার প্রভাবশালী হওয়ায় আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রায়ই বাধার মুখে পড়তে হয়। নদী ও বাজারের জমিতে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ বেআইনি বলেও তিনি জানান।
শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইদুল ইসলাম বলেন, “নদী ও বাজারসহ সব সরকারি জমির দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এরপর ধাপে ধাপে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
সরকারি জমি দখল, নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া, এবং ঐতিহ্যবাহী বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে নদী পরিব্রাজক দলের নেতৃবৃন্দ।
ভোরের আকাশ/জাআ