ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০২:৫৯ পিএম
ছবি- ভোরের আকাশ
গাজীপুরের শ্রীপুরে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।এ ঘটনায় অভিজ্ঞতাহীন এসএসসি পাস ওটি (অপারেশন থিয়েটার) ইনচার্জের বিরুদ্ধে দায় চাপিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।শনিবার দুপুরে উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার আল রাজী হাসপাতালে।এ ঘটনায় নিহত নবজাতকের বাবা শনিবার রাতে থানায় অভিযোগ করেছে।
অভিযুক্তরা হলো ওই হাসপাতালের পরিচালক রিপন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন, ডা. মনিরুজ্জামান, কথিত ওটি ইনচার্জ কল্পনা, প্যাথলজিষ্ট সোহেল রানা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোর চারটার দিকে উপজেলার আজুগীর চালা গ্রামের শারমিনের প্রসব ব্যাথা উঠে।
স্বজনরা তাকে দ্রুত ওই হাসপাতালে নিয়ে আসেন।কথিত ওটি ইনচার্জ কাম নার্স কল্পনা ১৩ হাজার টাকার চুক্তিতে সিজারের কথা বলে ওই নারীকে হাসপাতালের তিন তলার একটি কক্ষে নিয়ে যান।সেখানে তার আল্ট্রাসনোগ্রাম, রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
এক পর্যায়ে কল্পনা ও তাে সহযোগীরা ওই নারীকে সেলাইন সহ ইনজেকশন পুশ করে।পরে চার পাঁচজন মিলে হাত পা ধরে টানাহেঁচড়া করে সন্তান প্রসব করান।এ সময় কোন ডাক্তার ছিল না।পরে ডাক্তার এসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান নবজাতক মারা গেছে।
নবজাতকের মা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ দশ বছর পরে আমার সন্তান হয়েছে।আমার পেটের সন্তান স্বাভাবিক ছিল। সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য কল্পনার সাথে তেরো হাজার টাকার চুক্তিতে হাসপাতালে ভর্তি হই।পরে কল্পনা ব্যথা বাড়ানোর জন্য সেলাইনের সাথে দুইটা ইনজেকশন দেন।কিছু সময় পরে পেটের ভেতর সন্তানের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়।এ সময় কল্পনা ও তার সহযোগীরা চার পাঁচ জনে আমার হাত পা ধরে পেটে চাপ দিয়ে নিচের দিকে কেটে টানাহেঁচড়া করে সন্তান প্রসব করান।পরে শুনি আমার নবজাত মেয়ে মৃত।ওরা ডাক্তার ছাড়া ভূল চিকিৎসা দিয়ে আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছে।
নিহতের বাবা নাজমুল বরেন, আমার সন্তানকে ভূল চিকিৎসা দিয়ে মেরেছে।কোন ডাক্তার ছিল না।আমি অভিযুক্তদের বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের কথিত ওটি ইনচার্জ কাম নার্স কল্পনা জানান, তিনি সিংগাদীঘি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বা বাণিজ্য বিভাগে এসএসসি পাস করেছে।তার নার্সিং এর উপর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নাই।তাছাড়া সে ওটি ইনচার্জ না। রোগীকে ডাক্তারের ব্যবস্থা পত্র ছাড়াই সেলাইন, ইনজেকশন দিয়ে ছিলেন।রোগীর অবস্থা ভালো না থাকায় তিনি দ্রুত নিজেই চিকিৎসা দেন।পরে সন্তান প্রসব করান। বাচ্চা নড়াচড়া না করায় ডাক্তারকে খবর দেন।ডাক্তার বলেন নবজাতক মৃত।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. প্রানজল দাস জানান, কোন ক্রিটিক্যাল রোগী এখানে চিকিৎসা করা হয় না। হাসপাতালের ওটি ইনচার্জ কল্পনা এ রোগীর বিষয়ে ভালো জানেন।আমি বাচ্চা প্রসবের খবর পেয়ে তিন তলায় গিয়ে দেখতে পাই শিশুর মোভম্যান্ট নেই।তাকে পাশের অপু চাইল্ডকেয়ার হাসপাতালে পাঠাই পরীক্ষার জন্য। সেখান থেকে জানানো হয় বেবিটি মৃত।
হাসপাতালের ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ সকল দায় অস্বীকার করে বলেন, এখানে কোন সমস্যা হয়নি।স্বাভাবিকভাবে রোগীর স্বজনরা তাকে নিয়ে গেছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের নিকট থেকে ঘটনা শুনেছি অভিযুক্ত হাসপাতাল ভিজিট করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল ইসলাম জানান, রাতে ওই নবজাতকের মরদেহ স্বজনরা থানায় নিয়ে আসেন।এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি।নিহত শিশুর মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দি আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ভোরের আকাশ/জাআ