নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:০৬ পিএম
সংগৃহীত ছবি
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ ঘোষণার এক দফা দাবিতে শিক্ষা ভবনে অবস্থান কর্মসূচি আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা ৩টায় ঢাকা কলেজ শহীদ মিনারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে যৌথ লিখিত বক্তব্য দেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ ও মো. আবির হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তির পর আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এক দফা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। তবে গতকাল রাতে আমাদের শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিই আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান এক দফার কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। আমরা আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এ সময়ের মধ্যে পরবর্তীতে যেকোনো পরিস্থিতির আলোকে আমাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করে জানাবো।
সাত কলেজের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ২০১৭ সাল থেকে চলছে জানিয়ে তারা বলেন, আমরা এখন ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রয়েছি। আমরা মনে করছি, এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে শিক্ষার্থীদের সাথে চলা দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনার অবসান হবে। সুযোগ তৈরি হবে একটি গুণগত ও মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার। এখানে তৈরি হবে গবেষণার পরিবেশ।
আবির বলেন, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি খসড়া প্রকাশের কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও শিক্ষা সিন্ডিকেট ও ষড়যন্ত্রকারীদের চাপে সরকার এ খসড়া এখনো চূড়ান্ত করে প্রকাশ করছে না। সর্বশেষ আমরা গত ৭ ডিসেম্বর অধ্যাদেশ প্রকাশ, নতুন সেশনের ক্লাস শুরু করে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর এক দফা দাবি নিয়ে শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকার তথা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত সময়ের মতো এবারও আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের যে সময়সীমা জানানো হয়েছে, সে সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ এবং নবীনদের শ্রেণি পাঠদান শুরু হবে। আমরা শুনেছি, চলতি মাসের মধ্যে অধ্যাদেশের আরেকটি খসড়া প্রকাশ করা হবে। আমরা সেই খসড়ায় গভীর দৃষ্টি রাখছি। শুনেছি, পূর্বের খসড়ায় বৃহৎ সংশোধনী আনা হচ্ছে। শিক্ষা সিন্ডিকেট তথা ষড়যন্ত্রকারীদের প্রেসক্রিপশনে এমন সংশোধনী আনা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে।
আব্দুল্লাহ ফাহাদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাদেশ ও নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর বিষয়গুলো পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অধ্যাদেশের বিষয়ে বলা হয়েছে, পরিমার্জনের কাজ সম্পন্ন করে আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিমার্জিত খসড়ার ওপর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা হবে। তবে এ খসড়া কবে প্রকাশ হবে বা চূড়ান্ত অধ্যাদেশ কবে প্রকাশ হবে, এসব বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা উল্লেখ করা হয়নি। আর ক্লাস শুরুর বিষয়ে বলা হয়েছে, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের থেকে প্রকাশিত অধ্যাদেশে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া গুণগত শিক্ষার মান ও অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের অধ্যাদেশে যদি এর ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে শিক্ষার্থীরা সে অধ্যাদেশ ছুড়ে ফেলে দেবে। শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে কোনো ষড়যন্ত্রকারীদের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষার মান নিশ্চিতের লক্ষ্যেই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এদিকে গত ১২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, সাত কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গুজব এড়িয়ে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে পৃথক করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয়। প্রস্তাবিত নামটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নির্ধারণ করে। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।
ভোরের আকাশ/তা.কা