আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০১:১৫ পিএম
ছবি- সংগৃহীত
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সংখ্যা ৩০ এর বেশি দেশ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী ক্রিস্টি নোম। বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) ফক্স নিউজের ‘দ্য ইংরাহাম অ্যাঙ্গেলে’ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজের দ্য ইনগ্রাহাম অ্যাঙ্গেল–এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের নিকটে ন্যাশনাল গার্ডের এক সদস্যের ওপর হামলা ও প্রাণহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করার চেষ্টা চলছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকারে নোমকে জিজ্ঞেস করা হয় ট্রাম্প প্রশাসন কি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকা ৩২ দেশে বাড়াতে যাচ্ছে। জবাবে তিনি বলেন, আমি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলছি না, তবে এটির সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রেসিডেন্ট এখনও বিভিন্ন দেশের বিষয়ে মূল্যায়ন করছেন।
এর আগে গত জুনে ট্রাম্প প্রশাসন ১২ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। পাশাপাশি আরও সাত দেশের ওপর আরোপ করা হয় ভ্রমণ বিধিনিষেধ। মোট ১৯ দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে (২০২৫ সালের জুন থেকে) নিচের দেশগুলোর নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা ভিসা-সীমা আরোপ করা হয়েছে। যেমন-
পূর্ণ উৎপূরণ (Fully banned)
আফগানিস্তান (Afghanistan)
মায়ানমার (Myanmar)
চাদ (Chad)
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (Republic of the Congo)
ইকুয়েটরিয়াল গিনি (Equatorial Guinea)
এরিত্রিয়া (Eritrea)
হাইতি (Haiti)
ইরান (Iran) —
লিবিয়া (Libya) —
সোমালিয়া (Somalia) —
সুদান (Sudan) —
ইয়েমেন (Yemen)
এছাড়া আংশিক সীমাবদ্ধতা (Partial restrictions) রয়েছে বুরুন্ডি (Burundi), কিউবা (Cuba), লাওস (Laos), শিয়েরা লিওন (Sierra Leone), টোগো (Togo), তুর্কমেনিস্তান (Turkmenistan), ভেনেজুয়েলা (Venezuela)। এই ১৯ দেশ বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।
প্রশাসনের দাবি ছিল, ‘বিদেশি সন্ত্রাসী’ ও অন্যান্য নিরাপত্তা হুমকি প্রতিরোধেই এ সিদ্ধান্ত। নিষেধাজ্ঞা অভিবাসী, পর্যটক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী—সব ধরনের ভ্রমণকারীর ওপরই প্রযোজ্য।
নতুন করে কোন কোন দেশ তালিকায় যুক্ত হতে পারে—এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি নোম। তিনি বলেন, যদি কোনো দেশের সরকার অস্থিতিশীল হয়, তারা নিজেদের নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারে অথবা আমাদের ভেটিং প্রক্রিয়ায় সহায়তা না করে, তাহলে সেই দেশ থেকে মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে দেব কেন?
এর আগে রয়টার্স জানিয়েছিল, স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি অভ্যন্তরীণ নথির ভিত্তিতে আরও ৩৬টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। তালিকায় আরও দেশ যুক্ত হলে তা হবে গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড সদস্য হত্যার পর প্রশাসনের সাম্প্রতিক অভিবাসন পদক্ষেপের বড় ধরনের সম্প্রসারণ। তদন্তকারীরা বলছেন, ওই হামলা চালায় একজন আফগান নাগরিক। ২০২১ সালে পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করছে, ওই কর্মসূচিতে যথাযথ যাচাই-বাছাই হয়নি।
হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে তিনি ‘তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ’ থেকে অভিবাসন ‘স্থায়ীভাবে স্থগিত’ করবেন। যদিও তিনি কোন দেশগুলোকে এ তালিকায় রাখবেন তা স্পষ্ট করেননি। এর আগে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছিল, বাইডেন প্রশাসনের আমলে অনুমোদিত আশ্রয় প্রার্থীসহ ১৯ দেশের নাগরিকদের দেওয়া গ্রিন কার্ড–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ট্রাম্প অভিবাসন আইন প্রয়োগকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহরে ফেডারেল এজেন্ট পাঠানো থেকে শুরু করে মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেয়ার মতো নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এতদিন ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কার কার্যক্রমকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিল, তবে এবারই বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থায়ও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। সূত্র: রয়টার্স
ভোরের আকাশ/মো.আ.