বলিউডের নাইটিঙ্গেল খ্যাত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর আজ রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মারা গেছেন। কিন্তু, আপনি কি জানেন, লতা মঙ্গেশকরের আসল নাম ছিল হেমা? তার বাবার নাটকের একটি চরিত্র ‘লতিকা’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তার নাম পরিবর্তন করে লতা রাখা হয়।
লতা মঙ্গেশকরের এমন আরো কিছু অজানা তথ্য জেনে নিন-
যেভাবে তার সঙ্গীত প্রতিভা আবিষ্কার করেন বাবা
লতা মঙ্গেশকরকে একদল বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেখানে তার বাবা পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর লতার মধ্যে গানের প্রতিভাব খুঁজে পেয়েছিলেন।
দীনানাথ একটি অডিটোরিয়াম সংস্থা পরিচালনা করতেন। সেখানে লতা মঙ্গেশকর পাঁচ বছর বয়সে গান গাওয়া শুরু করেন। লতার রাগ পুরিয়া ধনশ্রী গাওয়ার ক্ষমতা তার গানের প্রতিভা খুঁজে পেতে সহায়তা করেছিল।
স্টারডাস্টকে তিনি বলেছিলেন, একবার আমার বাবা তার অনুসারীকে একটি রাগ অনুশীলন করতে বলেছিলেন। আমি খুব কাছ থেকে সেটা দেখছিলাম এবং আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। কারণ তিনি ভুল নোট ধরেছিলেন। পরে আমি তাকে সংশোধন করছিলাম। তখন বাবাও আমার মাঝে তার অনুসারী খুঁজে পান।
সেদিন বাবা মাকে বললেন, ‘আমাদের বাড়িতে একজন শিল্পী আছেন। এটা আমরা কখনোই জানতাম না।’
স্কুল ছাড়ার কারণ
পাঁচ বছর বয়সে লতা মঙ্গেশকর তার বাবার মারাঠি নাটকে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। যেগুলো ‘সংগীত’ নাটক নামে পরিচিত।
স্কুলে তার প্রথম দিনে অন্যদের সঙ্গীত শেখাতে শুরু করেন। তখন শিক্ষক তাকে থামিয়ে দেন। কেউ কেউ স্বীকার করেন, তিনি এতে অনেক রেগে যান এবং ক্লাসে যাওয়া ছেড়ে দেন। আবার অনেকেই বলেন, তারা আশাকে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি চলে যান
১৩ বছরে গান প্রকাশ?
লতাজি তার বাবার কাছ থেকে গান শেখ বাদ দিয়ে আমান আলি খান সাহেব এবং আমানত খানের মতো কিংবদন্তিদের থেকে তালিম নেন।
তিনি ১৯৪২ সালে মারাঠি চলচ্চিত্র কিটি হাসাল-এর জন্য প্রথম গান রেকর্ড করেন। তবে, এটি কখনো আলোর মুখ দেখেনি। কারণ গানটি চলচ্চিত্র থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।
অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন
তিনি ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলেন এবং আটটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ভাইবোনদের জন্য (মীনা, আশা, ঊষা এবং হৃদয়নাথ) তিনি তখন পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তবে, অভিনয় পেশা না ছেড়েই কিটি হাসালের (১৯৪২) প্লেব্যাক করেন।
শুরুতে সুযোগ পাননি লতা মঙ্গেশকর
প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করে শুরুতেই সুযোগ পাচ্ছিলেন না লতা মঙ্গেশকার। কারণ কখন নূর জাহান ও শামশাদ বেগমের মতো কণ্ঠশিল্পীরা জনপ্রিয় ছিলেন।
অশ্রুসিক্ত প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু
১৯৬২ সালের কথা। চীনের বিরুদ্ধে বিবাদে হেরে যায় ভারত। যখন লতা মঙ্গেশকর সাহসীদের অভিবাদন জানাতে ‘আয়ে মেরে ওয়াতান কে লগন’ গানটি গেয়েছিলেন।
সেই গান শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু।
মোহাম্মদ রফির সঙ্গে ঝগড়া
৬০-এর দশকে লতা মঙ্গেশকর এবং মোহাম্মদ রফির ডুয়েটকে হিটের গ্যারান্টি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে, এই জুটি আলাদা হয়ে যায়। তারা চার বছর ধরে কথাও বলেননি।
রয়্যালটি নিয়ে তাদের এই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তিনি সঙ্গীত পরিচালকদের মতো রয়্যালটি চেয়েছিলেন, কিন্তু মোহাম্মদ রফি তার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হননি।
১৯৬১ সালের মায়া চলচ্চিত্রে একটি গানে রেকর্ডের সময় এই দ্বন্দ্ব সামনে আসে। তিনি এতটাই বিচলিত হয়েছিলেন যে, স্টুডিওতেই রফি সাহেবের সঙ্গে ডুয়েটা গাওয়া বা সহযোগিতা বন্ধের ঘোষণা করেছিলেন। নার্গিসের অনেক চেষ্টার পরে এই জুটি মীমাংসা করতে রাজি হয়েছিল।
রাগী ছিলেন
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে লতা মঙ্গেশকর তার দোষের দিকটির কথা তুলে ধরেন। লতা বলেছিলেন, বছরের পর বছর ধরে তিনি এটি মোকাবিলা করেছেন।
ভারতরত্ন পুরষ্কারপ্রাপ্ত এই কিংবদন্তি বলেছিলেন, তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন থেকেই অনেক রাগী ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বদলে যায়।
মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই
১৯৬২ সালে লতা মঙ্গেশকর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনি। পরে জানা যায়, তাকে স্লো বিষ দেওয়া হয়েছিল। তিনি তিন মাস ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, এই ঘটনার পরপরই তাদের রাঁধুনি বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়।
রবিউল কমল
লেখক ও সাংবাদিক
মন্তব্য