-->
শিরোনাম

সবচেয়ে বেশি সওয়াব অর্জনের মাস

বিল্লাল বিন কাশেম
সবচেয়ে বেশি সওয়াব অর্জনের মাস
প্রতীকী ছবি

আল্লাহতাল্লার কাছে আরবি বার মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার মাস হলো মাহে রমজান। এটি ফজিলতের মাস, গুনাহ মাফের মাস, সবচেয়ে বেশি সওয়াব অর্জনের মাস। মাহে রমজানকে বলা হয় মুসলমানদের জন্য নেকি অর্জন করার মৌসুম। আজ আমরা ইসলামের ইতিহাসের দৃষ্টিতে প্রথম রমজান দেখার চেষ্টা করবো।

আমরা অনেকেই হয়তো ইসলামের ইতিহাসের প্রথম রমজানের কথা জানি না। আল্লাহর কাছ থেকে রমজান মাসে রোজা বা সিয়াম সাধনা/ রাখার বিধানের আদেশ হয় রাসুলাল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করার দ্বিতীয় বছর। শাবান মাসে আল্লাহ্ জানিয়ে দেন, পরের মাসে রোজা রাখতে হবে। মদিনার অবস্থা তখন একদম ভাল নয়। আওস আর খাজরাজ- এই দুই গোত্রের বাস ছিল মদিনায়। ইসলাম আসার পর তাদের বহু বছরের গৃহযুদ্ধ থেমেছে মাত্র। কিন্তু এই গৃহযুদ্ধে ধ্বংস প্রায় অর্থনীতি।

তার উপর মক্কা থেকে হিজরত করে আসা একদম নিঃস্ব মুসলিমদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে মদিনার। ভয়ংকর অনিশ্চিত একটা সময়। তার উপর মক্কার শক্তিশালী এবং সম্পদশালী কুরাইশদের হুমকি। এই অবস্থাতেই মুসলিমদের জীবনের প্রথম সিয়াম সাধনার রমজান আসলো। সেই রমজানেই সংগঠিত হল কুরাইশদের সঙ্গে প্রথম যুদ্ধ- বদরের যুদ্ধ। ইসলামের প্রথম রমজানও ছিল এক ভীষণ রকম সংগ্রামের মাস- অর্থনৈতিক দুর্যোগ, নতুন একটা জাতির অনিশ্চিত যাত্রা, আর এক প্রবল পরাক্রমশালী শত্রুর বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধ।

হাজার বছরের পরিক্রমায় আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম রমজানের সত্যিকার স্পিরিট। রমজান ইফতার পার্ট আর উৎসবের মাস তো নয়। এই মাস আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস, যেন আমরা মুত্তাকি হতে পারি। রমজান কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাস। আল্লাহ্ এভাবেই রমজানের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়েছেন।

করোনাকালের গত দুইটি রমজানে যে দুর্যোগ গেছে তা একজন মুসলিমের জন্য একঅর্থে ছিল সুযোগের মাস। হারিয়ে যাওয়া রমজানকে খুঁজে পাওয়ার এক অসাধারণ সুযোগ। সেই প্রথম রমজানের মুসলিমদের মতো পরিমিত খাওয়া, সাধারণ জীবন, আর শুধুই ইবাদতের মাস রমজান। অফিসের ব্যস্ততা ছিল না, শপিং আর ইফতার পার্টির চাপ ছিল না, সামাজিকতার বাহুল্য ছিল না। শুধুই ছিল প্রশান্ত চিত্তে মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে হারিয়ে যাওয়া যোগাযোগ নতুন করে তৈরি করার সুযোগ। সেই প্রথম রমজানের মতো ভয়ংকর অনিশ্চিত সময়ে আল্লাহর রহমতে শান্তি খুঁজে পাওয়ার সুযোগ।

এই অসাধারণ রমজানকে স্বাগত জানানোর মানসিক প্রস্তুতি নেয়ার সময় ছিল এই কয়দিন। আমাদের অতীতের সকল সীমা লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তৈরির নতুন পৃষ্ঠা এই রমজান। দ্বিতীয় হিজরির সেই প্রথম রমজানের মতো আসুন এই রমজানকে আমাদের তাক্বওয়া অর্জনের উপলক্ষ বানিয়ে ফেলি। আল্লাহ্ এক কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে অসাধারণ এক সুযোগ দিয়েছেন। আসুন ১৫০০ বছর আগের সেই প্রথম রমজানকেই আবার নিয়ে আসি এবার আমাদের জীবনে। আল্লাহ রমজানে আমাদের সকল ধরনের গোনা মাফ করার সুযোগ দিয়েছেন আর আমরা সেই সুযোগকে কাজে লাগাবো ইনশাআল্লাহ।

লেখক: উপ-পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। [email protected]

মন্তব্য

Beta version