পবিত্র মাহে রমজানের ৩০ রোজার প্রতিদিন একটি করে দোয়া রয়েছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে এই দোয়াগুলো পড়তেন। ‘আলবালাদুল আমিন’ ও ‘মিসবাহুল কাফআমি’ নামক গ্রন্থে রয়েছে এই দোয়াগুলো। ৫ম রোজার দোয়ার অনুবাদ: হে আল্লাহ! এই দিনে আমাকে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমাকে শামিল করুন আপনার সৎ ও অনুগত বান্দাদের কাতারে। হে আল্লাহ! মেহেরবানি করে আমাকে আপনার নৈকট্যলাভকারী বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করুন। আপনি শ্রেষ্ঠ দয়াবান।’
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ যথাক্রমে কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত প্রভৃতি যেমন আল্লাহর ফরজ ইবাদত, মাহে রমজানে আল্লাহর নিয়ামত উপভোগ করে শুকরিয়া আদায় করাও ইবাদত। এ মাসে দিনে-রাতে যত বেশি এবাদত-বন্দেগি করা যায়, তার চেয়েও বেশি সওয়াব লাভ করা যায়। যার কারণে এই রমজান মোবারকে ফরজ নামাজের পাশাপাশি সুন্নত ও নফল নামাজে যত্নবান হওয়া দরকার। বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা, জিকির আসকারসহ সব ভালো কাজই রোজার এবাদতে পরিগণিত হবে। রমজান হলো সেই মাস যে মাসে আল্লাহ নিজেই মোমিনদের ভালো কাজের প্রতিদান বাড়িয়ে দেন এবং ক্ষমা করে থাকেন।
হজরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, রোজায় প্রত্যেক আদমসন্তানের ভালো কাজের প্রতিদান দশ থেকে সাত শত গুণ বেশি পাওয়া যাবে। রোজা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ নিজেই এর প্রতিদান দিবেন। রমজানে ভালো কাজের প্রতিদান কতটুকু হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভালো কাজ বলতে কোরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা, জিকির-আসকার, এবাদত- বন্দেগি ইত্যাদি বোঝায়। রোজা রেখে যদি কেউ ভালো কাজ করেন, আল্লাহ পাক তার এই উত্তম কাজের প্রতিদান নিজেই দান করেন। মাহে রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) বেশি মাত্রায় এবাদতে মগ্ন হয়ে যেতেন। সাহাবাগণও তাকে অনুসরণ করতেন।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন রমজান মাস আসতো, তখনই রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ পাকের এবাদতের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও তৎপর হয়ে যেতেন। আর গোটা মাসেই নিজের বিছানা মোবারকের ওপর তাশরিফ আনতেন না। (দুররে মানসুর, ১ম খণ্ড, ৪৪৯পৃষ্ঠা) মাহে রমজানে বান্দার উচিত আল্লাহর দরবারে খালেছ নিয়তে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকা। আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত করে যতবেশি কান্নাকাটি করা যায়, দোয়া করা যায় ততই উত্তম।
আরেক হাদিসে আছে, হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যখন রমজানের আগমন হতো, তখন প্রিয়নবী (সা.) এর চেহারা মোবারক পরিবর্তন হয়ে যেত। আর তিনি বেশি পরিমাণে নামাজ পড়তেন, খুব কান্নাকাটি করে দোয়া করতেন এবং আল্লাহর ভয় হুজুরকে আচ্ছন্ন করত। (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, ৩১০ পষ্ঠা)। মাহে রমজানে রোজা রেখে সবসময় আল্লাহ পাকের জিকির আসকার এবং তার প্রিয় হাবিবের প্রতি দরুদ পাঠ করা এবাদত।
আমিরুল মোমেনিন হজরত ওমর ফারুক (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, জাকেরুল্লাহে ফি রামাদানা ইয়্যুগফেরুলাহু ওয়া সায়েলুল্লাহে ফি’হে লা ইয়াখিবু। অর্থাৎ- রমজান মাসে আল্লাহ তাআলার জিকিরকারীকে ক্ষমা করা হয় এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে প্রার্থনাকারী বঞ্চিত হন না। (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১১)। প্রকৃতপক্ষে তারা অনেক বেশি সৌভাগ্যবান যারা এই রমজান মাস পেয়ে রোজা রেখে আল্লাহর এবাদতে মগ্ন থাকেন। যে ব্যক্তি প্রত্যেকটি রোজা, প্রত্যেক রাকাআত নামাজ এবং প্রত্যেক তাসবিহ সঠিকভাবে আদায় করেন, তার জন্য রয়েছে হাজারগুণের চেয়েও বেশি সাওয়াব। তিনিই তো আল্লাহর মকবুল বান্দা। তার জন্যই তো দুনিয়ায় রয়েছে কল্যাণ এবং পরকালে মুক্তির ব্যবস্থা। তিনিই তো আল্লাহ পাক ও তার প্রিয় হাবিবের দিদার লাভে সক্ষম হবেন।
হজরত ইব্রাহিম নাখই (রা.) বলেন ‘রমজান মাসে একদিন রোজা রাখা অন্যসময়ে এক হাজার রোজা রাখার চেয়ে উত্তম। রমজান মাসে একবার তাসবিহ পাঠ করা এবং এক রাকাআত নামাজ পড়া অন্য মাসে এক হাজার তাসবিহ ও এক হাজার রাকাআত নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম (দুররে মানসুর, ১ম খণ্ড, ৪৫৪ পৃষ্ঠা)। প্রিয় ভাইয়েরা আসুন! মাহে রমজানে এবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হয়ে যাই। বেশি করে আল্লাহকে ডাকি। কোরআন তেলাওয়াত করি। কোরআন ও হাদিসের মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের অন্তরকে কলুষমুক্ত করুন।
লেখক: উপ-পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। [email protected]
মন্তব্য