-->
শিরোনাম

রোজাদারকে ইফতার করালে জান্নাত সহজ হবে

বিল্লাল বিন কাশেম
রোজাদারকে ইফতার করালে জান্নাত সহজ হবে
প্রতীকী ছবি

১৯তম রোজার দোয়া: হে আল্লাহ! আমাকে এ মাসের বরকতের অধিকারী করুন। এর কল্যাণ অর্জনের পথ আমার জন্য সহজ করে দিন। এ মাসের কল্যাণ লাভ থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না। হে স্পষ্ট সত্যের দিকে পথ নির্দেশকারী।

আজ ১৯ রমজান। আজ আমারা ইফতারের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে আলোচনা করব। পবিত্র রমজানের অন্যতম নিয়ামত হলো ইফতার। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, কেউ যদি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ওই ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে একটি রোজার সওয়াব পাবে অথচ রোজা পালনকারীর নেকি মোটেই কমানো হবে না। ইফতারের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে স্বয়ং রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের সময় রয়েছে : ১. ইফতারের সময় ২. মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়’ (বোখারি ও মুসলিম)।

ইফতার শব্দটি আরবি ফুতুর শব্দ থেকে এসেছে। ফুতুর-অর্থ নাশতা। ইফতারের অর্থ খোলা, উন্মুক্ত করা, ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় সূর্যাস্তের পর খেজুর, পানি বা কোনো খাদ্যদ্রব্য ভক্ষণের মাধ্যমে রোজা ছেড়ে দেওয়াকে ইফতার বলে।

দোয়া কবুলের অন্যতম সময়: পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের সময় সত্যি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। অদৃশ্য শক্তির আদেশ পালনার্থে ভীষণ ক্ষুধা-তৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও বনি আদম প্রহর গুনতে থাকে সূর্যাস্তের। এ সময় মহান আল্লাহ আদম জাতির ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তাদের আশাআকাক্সক্ষা পূরণ করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইফতার করার সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়ে থাকে’ (আবু দাউদ শরিফ)। আর এ জন্যই হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রহ.) ইফতারের সময় পরিবারের সবাইকে সমবেত করে দোয়া করতেন।

মাহে রমজান ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতির শিক্ষা দিয়ে থাকে। এ মাসের কারণে মানুষ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার জ্বালা বুঝতে পারে। এ জন্য এক মুমিনের হৃদয় ধাবিত হয় অন্য মুমিনের সুখ-দুঃখের খবর সন্ধানে। যার বাস্তব রূপ প্রকাশ পায় ইফতারের মাধ্যমে। রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে।

রোজাদারকে ইফতার করানোর প্রসঙ্গে সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের এমন সংস্থান নেই যা দিয়ে আমরা কাউকে ইফতার করাতে পারি। তিনি (সা.) বলেন, আল্লাহ তাকেও এই সওয়াব দেবেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা শুকনো খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দিয়েও ইফতার করাবে; আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে আমার ‘হাউজে কাওছার’ থেকে এমনভাবে পানি পান করাবেন যার ফলে, সে জান্নাতে না পৌছানো পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না (বায়হাকি ওয়াবুল ঈমান, মেশকাত ১৭৪ পৃষ্ঠা)। আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, লোকেরা ততক্ষণ কল্যাণে থাকবে যতক্ষণ তারা ইফতার জলদি করবে (বোখারি, মুসলিম ১ খণ্ড ৩২১ পৃঃ মিশকাত ১৭৫ পৃঃ)।

আল্লাহ বলেন, আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় সেই বান্দা যে ইফতার সঠিক সময়ে করে (তিরমিজি ১ম খণ্ড, ৮৮ পৃঃ, মেশকাত ১৭৫ পৃঃ)। এ হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, ইফতারের নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরি করা মোটেই উচিত নয়। যদি কেউ ইচ্ছা করে ইফতারে দেরি করে তাহলে সে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে এবং আল্লাহর নিকট অপ্রিয় হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফ (রা.) বলেন, একবার আমরা (রমজানে) আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সফরে ছিলাম (তখন তিনি রোজা অবস্থায় ছিলেন) অতঃপর (সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর) তিনি একজন সাহাবিকে বললেন, নামো এবং আমার জন্য ছাতুগুলো দাও।

সাহাবি (সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর) লালিমা দেখে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) ওই যে সূর্য (দেখা যায়) তিনি (তার কথায় কান না দিয়ে) আবার বললেন, তুমি নামো এবং আমার জন্য ছাতু দাও। এভাবে তিন বার বললেন। অতঃপর তিনি (বেলাল রা.) নামলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য ছাতু গুললেন। তিনি তা পান করলেন। তারপর তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করে বললেন, যখন তোমরা দেখবে যে, রাত ওই দিক থেকে আসছে তখন বুঝবে সিয়াম পালনকরীর ইফতারের সময় হয়ে গেছে (বোখারি ২৬০ পৃঃ মুসলিম ১ম খণ্ড ৩৫১ পৃঃ)। আল্লাহ আমাদের কোরআন ও হাদিসের আলোকে রমজানে ইফতার করা ও করানোর তৌফিক এনায়েত করুন। আমিন।

লেখক: উপ-পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। [email protected]

মন্তব্য

Beta version