-->

ধনীর জমজমাট ইফতারি বাজার, হিসাবকষে কিনছেন মধ্যবিত্তরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
ধনীর জমজমাট ইফতারি বাজার, হিসাবকষে কিনছেন মধ্যবিত্তরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় আজব শহর। এখানে বাস করেন ৬৪ জেলার মানুষ। বাস করছেন নানা দেশের মানুষ। তিলোত্তমা এ শহরে যারা বাস করছেন, তাদের জীবনযাত্রায়ও রয়েছে ভিন্নতা। এ শহরে সাততলায় এসিরুমে বসে কেউ আয়েশভরে রাস্তায় জ্বলতে থাকা সোডিয়াম লাইটের আলো দেখেন। আবার ওই লাইটের নিচে শিশির-রোদ-বৃষ্টি সয়ে জীবনধারণ করেন একশ্রেণির মানুষ।

 

ওপরতলার এসব মানুষের সঙ্গে এসব মানুষের প্রার্থক্য সবকিছুতেই। পবিত্র রোজার মাস এলেও এ চিত্রের দেখা মেলে। কেউ প্রতিদিন শত শত টাকার ইফতার নষ্ট করেন আবার কেউ শুধু পানি দিয়েই সেরে নেন ইফতার। অন্যবারের মতো এবারো সে চিত্র ফুটে উঠেছে। জমে গেছে ইফতারি বাজার। তবে সবকিছু দর বাড়তি থাকায় এবার হিসাবকষে ইফতারি বাজার করতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের।

 

সিয়াম সাধনার মাস রমজানে রাজধানীসহ সারা দেশে জমে ওঠে ইফতারের বাজার। উচ্চবিত্তদের বা মধ্যবিত্তের ইফতারে বাহারি আয়োজন থাকলেও খেটে খাওয়া মানুষের ইফতার খুব সাদমাটা। অনেকেই শুধু পান্তা দিয়ে সারেন ইফতারি। আর কারো জন্য গলির মোড়ের টং দোকানের সস্তা ছোলা-মুড়িই সর্বোচ্চ আয়োজন। আবার যারা ভাসমান মানুষ, তারা পানি দিয়েই সেরে নেন ইফতার। দেখতে দেখতে ১০ রোজা চলে গেল। দিন যত যাচ্ছে, রাজধানীর ইফতারি বাজার তত জসজমাট হচ্ছে।

 

ঢাকার সবচেয়ে জমজমাট ইফতারি বাজার চকবাজারে। অন্যবারে মতো এবারো বাজারটি জমজমাট হয়ে উঠেছে। দুপুর থেকেই চকবাজারের শাহী মসজিদের সামনে দোকানিরা ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেন। দুপুরের পর থেকেই ইফতার কিনতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করতে শুরু করে। বিকেলে ইফতারসামগ্রী কিনতে আসা মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকে প্রতিদিনই। বিকেল ৩টার পর আরো জমজমাট হয়ে ওঠে বাজার।

 

সময় যত গড়াই, ভিড় ততই বাড়ে। একসময় বাজারে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। সরেজমিন চক সার্কুলার রোডে দেখা গেছে, শতাধিক ইফতারসামগ্রী বিক্রির অস্থায়ী দোকান বসেছে। বিক্রেতারা জানান, রমজান মাসজুড়েই চকবাজারের ইফতারসামগ্রীর বিষয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকে। তারা ঐতিহ্যবাহী এসব ইফতারসামগ্রী কিনতে রমজান মাসজুড়েই আগ্রহ নিয়ে চকবাজারে আসেন।

 

ইফতারসামগ্রীর প্রসঙ্গ এলেই সবার আগে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহারি সব পদের খাবারের নাম। রোজার শুরু থেকেই বড় বাপের পোলায় খায়, খাসির আস্ত রোস্ট, কাবাবসহ হরেক রকমের ইফতারের সমাহার ছিল রাজধানীর চকবাজারে। তবে এবার দাম বেশির অভিযোগ অনেক ক্রেতার। ইফতারসামগ্রীর দোকানগুলোয় সম্মিলিতভাবে উচ্চারিত হচ্ছিল সেই পুরোনো সংলাপ ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়’।

 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ চকবাজারে ছুটে আসে ইফতার নিতে। ক্রেতার চাপে যানজটের সৃষ্টি হয় চকবাজার এলাকায়। পুরান ঢাকার ইফতার কিনতে অনেকে ছুটে আসেন দূরদূরান্ত থেকে।

 

এখানকার ইফতারির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আস্ত খাসির কাবাব, আস্ত মুরগির কাবাব, মোরগ মুসাল্লম, বটি কাবাব, টিকা কাবাব, কোপ্তা, চিকেন কাঠি, শামি কাবাব, শিকের ভারী কাবাব, সুতি কাবাব, কোয়েল পাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, জিলাপি, শাহী জিলাপি, নিমকপারা, সমুচা, আলাউদ্দিনের হালুয়া, হালিম, দইবড়া, সৌদি পানীয় লাবাং, কাশ্মীরি সরবত এবং ৩৬ উপকরণের মজাদার খাবার ‘বড় বাপের পোলায় খায়’।

 

এদিকে পুরান ঢাকায় ইফতার বিক্রি জমজমাট হলেও প্রথম দিকে ভিড় কম ছিল বেইলি রোড়ে। তবে এখন এ বাজার জমে গেছে। প্রতিদিনই এখানে ভিড় বাড়ছে। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব দেখা গেছে ইফতার বাজারে। বেড়েছে পছন্দের নানা পদের খাবারের দাম।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, মাংস ও অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইফতারসামগ্রীর দাম বেড়েছে। সে কারণে সমস্যায় পড়েছেন মধ্যবিত্তরা। তারা হিসাবকষে ইফতারের বাজার করছেন। জানতে চাইলে লুৎফর রহমান এক ব্যক্তি ভোরের আকাশকে বলেন, সবকিছুর দাম বেড়েছে। যে কারণে এবারের ইফতারের বাজার কিংবা ইফতার একটু হিসাব করে কিনতে হচ্ছে।

 

গত বছরের তুলনায় এবার সবকিছুর দাম বাড়তি। আয় তো বাড়েনি। তাই হিসাব তো করতে হয়। এদিকে শুধু চকবাজার বা পুরান ঢাকা নয়, রাজধানীর প্রতিটি অলিগলিতে বসেছে ইফতারের বাজার। দুপুরের পর থেকেই সব এলাকা সরগমহয়ে ওঠে।

 

অলিগলি ও ফুটপাতের দোকানগুলোয় মুড়ি, ছোলা, আলুর চপ, ডিম চপ, বেগুনি, আখনি, ছানা, পেঁয়াজু, খিচুড়ি, হালিম, কাবাব, বাখরখানি, ফিরনি, দই, বিভিন্ন ধরনের ভাজি-বড়া, বিরিয়ানিরসহ নানা ধরনের ইফতারি বিক্রি হচ্ছে।

 

সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দোকানিরা খোলা রাস্তায় স্তরে স্তরে ইফতারপণ্য সাজিয়ে রাখছেন। এখান থেকে সবাই ইফতার কেনেন। তবে নিম্নবিত্তদের একমাত্র ভরসা এসব দোকান।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version