-->

রোজার বিধান আগেও ছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
রোজার বিধান আগেও ছিল

পবিত্র রমজান মাসের মাগফিরাত দশকের ১৩তম দিন আজ। হজরত দাউদ (আ.)-এর কাছে জবুর নাজিল হয়েছিল মাহে রমজানের ১২ তারিখে। হজরত দাউদ (আ.)-এর সময়েও সিয়াম বিধান ছিল। হাদিসে বর্ণিত সাহীিব আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) সারা বছর সিয়াম পালন করতেন।

 

প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাকে সারা বছর সিয়াম পালন করতে নিষেধ করে হজরত দাউদ (আ.)-এর মতো এক দিন সিয়াম পালন করতে নির্দেশ দেন। হজরত দাউদকে (আ.) আল্লাহ নবুওয়াত, হিকমত ও রাজত্ব দান করেছিলেন। কুরআন মাজিদে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম পালনকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের ওপর; যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার। (সূরা বাকারা : ১৮৩)।

 

রমজানের রোজা ফরজ হয়েছে হিজরতের দ্বিতীয় বছরে। তারিখে ইবনে জরীর ও আলবিদায়া ওয়ান নিহায়ায় বলা হয়েছে, হিজরি দ্বিতীয় সনের ১০ শাবান ফরজ হয় রমজানের রোজা। এ বছরেই রমজানের আগে কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ আসে। এর আগে নবী করীম (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম আশুরা বা মহররম মাসের দশম তারিখ ও আইয়ামে বীজ বা প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন।

 

তবে এসব রোজা তখন ফরজ ছিল কিনা, তা নিয়ে মতভেদ আছে। হানাফিরা মনে করেন এসব রোজা ফরজ ছিল। কিন্তু শাফেঈদের মতে রমজানের রোজার আগে কোনো রোজা ফরজ ছিল না। বরং আশুরা ইত্যাদির রোজা আগেও সুন্নত ছিল, এখনো সুন্নত। হানাফিদের পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায় আবু দাউদ শরিফের একটি হাদিস থেকে। আবদুর রহমান ইবনে মাসলামা তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন, আসলাম গোত্রের লোকেরা নবী করীম (সা.)-এর কাছে এলে তিনি তাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা কি আজকের এ দিনে (অর্থাৎ আশুরার দিনে) রোজা রেখেছ? তারা বলল, না।

 

তিনি বললেন, তাহলে তোমরা তোমাদের দিনটির অবশিষ্ট অংশ পূর্ণ করো এবং এটি কাজা করো। ইমাম আবু দাউদ বলেন, অর্থাৎ আশুরার দিন। বোখারি শরিফে হজরত সালামা ইবনুল আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সা.) আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে এ মর্মে ঘোষণা করে আদেশ দিয়েছিলেন, কেউ খেয়ে থাকলে সে যেন দিনের অবশিষ্ট অংশ রোজা রাখে।

 

আর যে ব্যক্তি খায়নি, সে যেন রোজা রাখে। কেননা আজ আশুরার দিন।

 

হজরত আয়েশা (রা.)-এর বর্ণনা আছে। তিনি বলেন, আশুরার দিনে কুরাইশরা ইসলাম-পূর্ব যুগে রোজা রাখত। আল্লাহর রাসূলও ইসলাম-পূর্ব যুগে এদিনে রোজা রাখতেন। যখন তিনি মদিনায় এলেন, তখন তিনি এদিনে রোজা রাখলেন এবং এদিনে রোজা রাখতে আদেশ দিলেন। তারপর যখন রমজান ফরজ হলো, তখন তিনি আশুরার দিনটি ছেড়ে দিলেন।

 

ফলে যে চাইল রোজা রাখল, আর যে চাইল ছেড়ে দিলো। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-এর এক দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে হজরত মুয়াজ (রা.) বলেন, আর রোজার অবস্থা এই যে, নবী করীম (সা.) মদিনায় এসে প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন।

 

এই হাদিসের অন্যতম রাবী ইয়াযীদ বলেন, নবী করীম (সা.) রবিউল আওয়াল থেকে (পরের বছর) রমজান পর্যন্ত ১৭ মাস এ ভাবে প্রতি মাসে তিন দিন ও আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। এসব রেওয়ায়েত থেকে রমজানের রোজা ফরজ হওয়া আগে আশুরা ও আইয়ামে বীজের রোজা ফরজ ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।

 

অবশ্য রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পরে আশুরা বা অন্য কোনো রোজা ফরজ নেই বলে সর্ববাদী সম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এ বিতর্ক নিছক বিদ্যায়তনিক পরিমÐলে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। বাস্তবে কোনো প্রতিফলন নেই।

 

শুধু প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সিয়াম পালন এমন একটি ইবাদত যা রমজানের আগেও প্রচলিত ছিল। তবে রমজান মাসের সঙ্গে নির্ধারিত ছিল না।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version