গত রাতে সারা দেশের রোজাদার মুসলমানরা যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও হৃদয়গ্রাহী ক্ষমাপ্রার্থনার মাধ্যমে পালন করেছেন পবিত্র লাইলাতুল কদর। ‘হে আল্লাহ! আমার সব গুনাহ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দিন। আমাকে সব দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র করুন। তাকওয়া ও খোদাভীতির মাধ্যমে আমার অন্তরকে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করুন।’ এ মাসে আমাদের মহানবী রাসূল (সা.) যে কাজগুলো বেশি করতেন, তা হলো আল্লাহর শোকর গুজারি ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। ধীরে ধীরে তাকওয়া অর্জনের এ মাস শেষ হয়ে আসছে।
রাসূল (সা.) দুই মাস আগে থেকেই রমজানের ইবাদত-বন্দেগির প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। আর রমজান মাসজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল ও ইবাদতে অতিবাহিত করতেন। রহমত লাভ গুনাহ মাফ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মাস মাহে রমজান। রমজানের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ কাজ হলো ইফতারের জন্য অন্য রোজাদার দাওয়াত দেয়া, পরস্পরকে ইফতার বিতরণ করা।
বিশেষত তা যদি হয় গরিব-অসহায়ের জন্য, তবে তা হবে সর্বোত্তম কাজ। করোনার পর এ সময়ে গরিবরা সত্যিই খুব অসহায় হয়ে পড়েছে। এ সময়ে মানুষকে ইফতার করালে সোয়াব আরো বেড়ে যাবে। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি অন্য রোজাদারকে ইফতার করাবে বা ইফতারি বিতরণ করবে সেও তার সমান সওয়াব পাবে। এতে ইফতারকারীর সাওয়াব থেকে কিছুমাত্র কমানো হবে না। এ সংকটে এটি করলে নেকি আরো বেশি হবে।
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার উম্মতকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে ওঠার জন্য রমজান মাসব্যাপী ইবাদত-বন্দেগি করতে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি নিজে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়েছেন পুরো রমজান। যেটি তার উম্মতের জন্য সুমহান শিক্ষা। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে বিশ্বনবীর শেখানো যে কাজগুলো করা জরুরি;
ক. রমজানে আল্লাহর জিকির করে দিন-রাত অতিবাহিত করা।
খ. বেশি বেশি কোরআনুল কারিম তেলাওয়াত ও তাফসির পড়া।
গ. অসহায়, গরিব-দুঃখী মানুষকে ইফতার ও সাহরি করানো।
ঘ. রমজান মাসজুড়ে বেশি বেশি দান-সাদকা করা।
ঘ. বিগত জীবনের গুনাহ মাফে রমজানে রাতের (তারাবি) নামাজ পড়া।
ঙ. বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা।
চ. আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দান-সহযোগিতা কর।
ছ. অসুস্থ মানুষের সেবা ও সহযোগিতা করা।
জ. পরিবার ও সমাজের লোকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
ঝ. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করা।
ঞ. মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মাগফিরাত কামনা করা।
ট. খেজুর দিয়ে সাহরি ও ইফতার করা। খেজুর পাওয়া না গেলে সাদা পানি পান করার মাধ্যমে তা আরম্ভ করা।
এছাড়া সাহরি ও ইফতারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা এবং শেষরাতে ভোর হওয়ার আগ মুহূর্তে সাহরি খাওয়া। রোজায় মেসওয়াক করা। তা দিনের যেকোনো সময়ে হোক তাতে কোনো অসুবিধা নেই। ঝগড়া বিবাদ না করা। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা এবং নীরবতা অবলম্বন করা।
কেউ ঝগড়া করলে এ কথা বলা, ‘আমি রোজাদার, আমি রোজাদার’। রমজানের রাতের নামাজ অর্থাৎ এশার নামাজ আদায়ের পর তারাবিহ নামাজ আদায় করা। কেউ এ নামাজকে সুন্নাত বলেছেন, আবার অনেকে মোস্তাহাব বলেছেন। তবে হাদিসে এরশাদ রয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে রমজানে রাতের (তারাবি) নামাজ পড়বে, আল্লাহ ওই ব্যক্তির বিগত জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’
পবিত্র রমজানে ওমরা করা সুন্নাত। কারণ রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘রমজানের একটি ওমরা আদায়ে হজের সমান সাওয়াব রয়েছে।’ পবিত্র রমজানে কিছু কিছু সময়ে আল্লাহ তার বান্দার দোয়া কবুল করেন এবং পাপ মার্জনা করেন। যেমন ইফতারের আগমুহূর্ত। এ সময়গুলোয় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা এবং অতীত পাপের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা আবশ্যক।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না; যথা ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)।
এছাড়া স্বয়ং রোজাও পাপ মার্জনার মাধ্যম। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা পালন করবে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (সহিহ বুখারি)।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য