-->
শিরোনাম

বছরজুড়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা বিএনপির

ইস্যু : খালেদার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন

এম সাইফুল ইসলাম
বছরজুড়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা বিএনপির

দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বছরজুড়ে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি। বছরের প্রথম থেকেই কর্মসূচি শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।তারা বলছেন- দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো ও দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের বিকল্প কিছুই নেই বিএনপির সামনে। এসব দাবি আদায়ে জনমত গঠন ও আন্দোলনে গতি বাড়াতে বছরজুড়ে পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

২০২১ সালের বেশিরভাগ সময় করোনার থাবায় বিপর্যন্ত ছিল দেশ। অধিকাংশ সময়জুড়ে ‘লকডাউন’ থাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত ছিল। বিদায়ী বছরটা রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির খুব একটা ভাল কাটেনি। দুই মামলায় দÐিত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত থাকলেও অসুস্থ ছিলেন বছরের বেশিরভাগ সময়। গত এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি ৫৩ দিন চিকিসার পর ১৯ জুন বাসায় ফেরেন। ১২ অক্টোবর আবারো হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। জটিল রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া ২৬ দিন চিকিৎসা শেষে ৭ নভেম্বর বাসায় ফেরেন। সবশেষ ১৩ নভেম্বর আবারো হাসপাতালে ভর্তি হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি এখনো এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- খালেদা জিয়া এখন লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।

এরপর থেকে বিএনপি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবিতে দলটি একমাসেরও বেশি সময় কর্মসূচি পালন করছে। দলটি এখন এ বিষয়ে জনমত গঠনে জেলা পর্যায়েও সমাবেশ করছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া এখনো মেলেনি। বছরের শেষ সময় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠনো ও ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপই বিএনপির মূল রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে ওঠে। চলমান সংলাপে বিএনপি যাবে না বলে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি নতুন বছরে কী করতে চায়? দলীয় সূত্র জানায়, নতুন বছরে বিএনপির আন্দোলনের ইস্যু দুটি। একটি হলো খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সুচিকিসার জন্য বিদেশে পাঠানো। অন্যটি হলো আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে মাঠে নামা। দলটির একাধিক সূত্র বলছে- খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিদেশে পাঠনোর দাবিতে বছরের শেষ সময়ে বেশকিছু কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে বিএনপি। কিন্তু সরকার এখনো তাতে পজিটিভ সাড়া দেয়নি। খালেদা জিয়াকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের আশ্রয়স্থল মনে করেন। তাই এই সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি মাঠের আন্দোলন আরো জোরদার করতে চায়। চলমান জেলা সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ঢাকায় একটি বড় জনসভা করার চিন্তা রয়েছে দলটির। ওই সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে আবারো মাঠে নামতে চায় বিএনপি।

এছাড়া খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপির বাইরের থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে চায় তারা। ভোটের আগে নির্বাচনী জোট না করলেও যুগপৎ আন্দোলনে কয়েকটি বামদলসহ ছোট দলকে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। নতুন বছরে দল ও অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করারও কথা রয়েছে। দলে নতুন নেতৃত্বকে সামনে আনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা এই বছরে শেষ করার কথা ভাবছে বিএনপি নেতারা।

এছাড়া টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালে রাজনৈতিক গুম, খুন, গ্রেফতার, মামলা ও সভা সেমিনারে বাধা দেয়ার একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করে দেশ বিদেশের ক‚টনৈতিকদের কাছে পৌঁছে দেয়ারও পরিকল্পনার আছে বিএনপির। সরকারকে চাপে ফেলতে বিদেশী মিত্রদেরকে কাজে লাগাতে সবধরনের পলিসি গ্রহণ করবে বিএনপি। ডিজিটাল প্লাটফর্মেও সরকার বিরোধী জনমত গড়ে তুলতে বছরের শুরু থেকেই প্রচারণা করতে চায় রাজপধের বিরোধী দল বিএনপি।

কী ধরণের কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির জেষ্ঠ্য যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভোরের আকাশকে বলেন, বিএনপি এখন যে আন্দোলনে নেই তা নয়। তবে নতুন বছরে একটু নতুন করেই কর্মসূচির কথা ভাবছে দল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় আছে। জনগণের ভোট তাদের কাজে লাগে না। তাই আন্দোলন ছাড়া তারা সহজে বিএনপির দাবি মানবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তিই বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় বলে মনে করেন তিনি। রিজভীর দাবি- গণতন্ত্রের মুক্তি আর খালেদা জিয়ার মুক্তি একসুতোয় গাঁথা। বছরের শুরুতেই চেয়ারপারসনের মুক্তি ও আগামী নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে বাধ্য করতে সবধরণের পলিসি নেয়া হবে।

হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি থাকবে কিনা জানতে চাইলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সময় সবকিছু বলে দেবে। সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের মনোভাবের ওপর। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার জনগণের মনের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই বিএনপির চলমান আন্দোলন নতুন বছরের শুরু থেকে গণআন্দোলনে রুপ দিতে সবধরণের ব্যবস্থা করা হবে। চেয়ারপারসনের মুক্তি ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে পাবে বলে মনে করেন এই বিএনপি নেতা।

 

ওএফএস

মন্তব্য

Beta version