-->

বৃহৎ ঐক্য গড়তে ‘কৌশলী’ বিএনপি

একহাতে জামায়াত অন্যহাতে বাম

এম. সাইফুল ইসলাম
বৃহৎ ঐক্য গড়তে ‘কৌশলী’ বিএনপি

একহাতে জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো আর অন্যহাতে বামসহ সরকারবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে বৃহৎ ঐক্য গড়তে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। তবে, জামায়াতের ক্ষেত্রে বেশ ‘কৌশলী’ দলটি।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এই ঐক্য গড়ে তোলা হচ্ছে। ২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশাপাশি আরো কয়েকটি দলকে নিয়ে ঐক্য গড়তে বিএনপি কাজ করছে। 

বিএনপি নেতারা বলছেন, যেসব দল সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আছে তাদের সবার সঙ্গে কথা বলে জোট করার কাজ চলছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার বিএনপি। গত কয়েক মাস থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসার দাবিতে পালন করা কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম বিএনপিকে বেশ চাঙা করে তুলেছে। একইসঙ্গে র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর নড়েচড়ে বসেছে বিএনপি।

আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে মাঠে নামতে চায় দলটি। সে লক্ষ্যে বিএনপি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। দুটি বিষয়কে সামনে রেখে এগোচ্ছে বিএনপি। প্রথমটি হচ্ছে- বর্তমান সরকারের অধীনে যে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় সে বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনা।

জনমত গড়ার অংশ হিসেবে নেতাকর্মীদের সরকারবিরোধী মনোভাব জোরালো করতে এই সরকারের অধীনে দলটি আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে।

সবশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে অংশগ্রহণ করায় দলটির জেলা কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তৈমূরকে নির্বাচনে সহযোগিতা করায় মহাগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকেও বহিষ্কার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের পর এই সরকারের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার বার্তা আরো স্পষ্ট হয়।

বিএনপি দীর্ঘদিন থেকে বর্তমান সরকারবিরোধী দলগুলোকে এককাতারে আনার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তাতে সবচেয়ে বড় বাধা জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের ফাঁসির পর ইমেজ সংকটে থাকা জামায়াতকে জোটে রাখা নিয়ে আরো বেশি বেকায়দায় পড়ে বিএনপি।

কয়েকটি বাম দল সরাসরি জামায়াতকে রেখে বিএনপির সঙ্গে জোট করতে আপত্তি তোলে। এরপর থেকে জামায়াতকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে বিএনপি। গত কয়েকটি স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে জামায়াতের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হলেও শেষ সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দলটি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি এবং বাম জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বাম দলগুলোকে কাজে লাগাতে চাইছে বিএনপি।

গত শুক্রবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামীর আন্দোলন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া দুজন সদস্যের সঙ্গে ভোরের আকাশের কথা হয়। তারা জানিয়েছেন- খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ২০-দলীয় জোটের ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে আন্দোলনের রূপরেখা ও বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে বা নেতৃত্ব নিয়েও আালোচনা হবে।

জানা গেছে, এই দুই জোটের পাশাপাশি শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল বাদে অন্য সব দলের সঙ্গে বসবে বিএনপি।

তবে জামায়াত ইস্যুতে বিএনপি কী করবে সে আলোচনা এখন সর্বত্র।

বিএনপির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য ভোরের আকাশকে বলেন, জামায়াতকে বাদ দেওয়ার যেসব সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে তার আসলে বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। শুক্রবারের বৈঠকে জামায়াতকে নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে একটি কমিটমেন্টে আসতে পারে বিএনপি। আর বামসহ অন্যদের সঙ্গেও ভিন্ন কমিটমেন্টে আলোচনা চলছে। তবে জামায়াতের সঙ্গে এই মুহূর্তে সরাসরি কোনো আলোচনায় কৌশলগত কারণে নাও বসতে পারে পারে বিএনপি। ভিন্ন ভিন্ন জোট ও দলকে আস্থার জায়গায় আনতে নানা কৌশল অবলম্বন করতে পারে দলটি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র জামায়াত নয়, বিভিন্ন দলের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। জামায়াতকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তার জানা নেই।

নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বৃহত্তর ঐক্য গড়তে বিএনপি ব্যাপকভাবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

স্থায়ী কমিটির অরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আছে এমন সব দলকে আমরা পাশে চাই। তাদেরকে নিয়ে আমরা বৃহত্তর জোট গঠনে কাজ করছি।  

মন্তব্য

Beta version