নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার ইস্যুতে চলতি সপ্তাহ থেকেই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করবে বিএনপি। এ ছাড়া ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতি ও অন্যান্য দলের সঙ্গে সমঝোতাপূর্ণ
প্রতিশ্রুতি নিয়েও আলোচনা করতে চান দলটির নেতারা। গত ২৮ জানুয়ারি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গঠিত দুই কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তাও
বলেছেন বিএনপি নেতারা।
দলটির একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলছে, এই বৈঠকটি হচ্ছে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আগেই এসব দলের সঙ্গে লক্ষ্য নিয়ে কথা হয়েছে বিএনপির। বৈঠকের পর বিএনপির সঙ্গে একদফা যুগপৎ আন্দোলনে নামবে দলগুলো।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার বিএনপি। ২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশাপাশি আরো কয়েকটি দলকে নিয়ে ঐক্য গড়তে বিএনপি কাজ করছে
বেশ আগে থেকেই। আগামী সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জোটবদ্ধতার প্রয়োজনও বাড়ছে। বিশেষ করে আবারো সরকার নিজেদের প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন ও পছন্দসই লোক দিয়ে কমিশন গঠন
করবে এমনটি অনেকটাই নিশ্চিত হওয়ার পর বিএনপির পাশাপাশি ছোট দলগুলোও জোট গঠনে এগিয়ে আসছে।
তবে এবার জোট গঠনে বেশ ‘কৌশলী’ বিএনপি। কয়েকটি বাম দলের আপত্তির কারণে জামায়াতকে বিএনপি আপাতত সামনে আনছে না। আবার জোট থেকে বাদ দেওয়াও হচ্ছে না জামায়াতকে।
গত কয়েক মাস থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসার দাবিতে পালন করা কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম বিএনপিকে বেশ চাঙা করে তোলে। একইসঙ্গে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর নড়েচড়ে বসতে শুরু করে বিএনপি।
সরকারবিরোধী জনমত গড়ার অংশ হিসেবে নেতাকর্মীদের মনোভাব জোরালো করতে এই সরকারের অধীনে দলটি আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ারও ঘোষণা দেয়। সবশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে দলীয়
সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে অংশগ্রহণ করায় দলটির জেলা কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও মহাগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে বহিষ্কার করা হয়। এই সরকারের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার বার্তা আরো স্পষ্ট হয়।
গত ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামীর আন্দোলন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করতে দুটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির একটির নেতৃত্বে আছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে থাকা দুই স্থায়ী কমিটির সদস্য হচ্ছেন ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র
রায়ের নেতৃত্বে অপর কমিটিতে আছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক এই সপ্তাহে শুরু হবে। এসব দলের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর সারসংক্ষেপ তৈরি করে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
তারপর একদফা যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির দিকে এগোবে বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সদস্য ভোরের আকাশকে জানিয়েছেন, ২০-দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে এমন সব দলের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। ক্ষমতায় গেলে কীভাবে
দেশ পরিচালনা করবে বা নেতৃত্ব নিয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া জামায়াতকে বাদ দেওয়ার যেসব সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে তার আসলে বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। আপাতত বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে না বসলেও জোট
থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আবারও একতরফা নির্বাচনের দিকে হাঁটছে। নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এখন সবার মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভোটারবিহীন নির্বাচন আর করতে দেওয়া হবে না। এজন্য বিএনপি গণতন্ত্রমনা সব দলকে নিয়ে একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার কাজ করছে।
গত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এসব কাজে আরো অগ্রগতি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপি বৈঠকে বসছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আছে এমন সব দলকে আমরা পাশে চাই। তাদের নিয়ে আমরা বৃহত্তর জোট গঠনে কাজ করছি। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ
সরকারের দাবি আদায়ে এক দফা আন্দোলন ছাড়া পথ খোলা নেই বলে জানান টুকু।
মন্তব্য