-->

জোট শরিকদের আস্থায় আনতে জোর তৎপরতা বিএনপির

এম. সাইফুল ইসলাম
জোট শরিকদের আস্থায় আনতে জোর তৎপরতা বিএনপির

বৃহত্তর জোট গঠনের চেষ্টার পাশাপাশি ২০-দলীয় জোটের শরিকদের আস্থায় আনতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে বিএনপি। গত সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই জোট শরিকদের অবমূল্যায়ন বা তাদের সিদ্ধান্ত না নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর নির্বাচনে গিয়ে ভরাডুবিতে জোট শরিকদের মাঝে সৃষ্ট ক্ষোভ নিরসনের কাজ শুরু করেছে দলটি। ইতোমধ্যে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও শুরু করেছেন।

২০-দলীয় জোটের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি ও শরিক দলের নেতারা বলছেন, জোটে কোনো ধরনের ভাঙন নেই। তবে, ভিত আরো মজবুত ও আগামীর আন্দোলনে বৃহত্তর জোট গঠনের আগে দীর্ঘদিনের রাজপথের সঙ্গী জোটকে শক্তিশালী করতে কাজ চলছে।

জানা গেছে, গত সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির হঠাৎ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেয়নি ২০-দলীয় জোটের শরিকরা। বিশেষ করে একতরফা নির্বাচনে গিয়ে বৈধতা দেওয়া নিয়েও নানা প্রশ্ন ছিল জোট শরিকদের মাঝে। এরপর বেশ ক্ষোভের সৃষ্টি হয় জোট নেতাদের মধ্যে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর জোটের হাতে গোনা দু-একটি বৈঠক হয়েছে। এছাড়া কর্মসূচি পালনে বিএনপির একলা চলো নীতিতে বেশ ক্ষুব্ধ হয় জোটের ছোট দলগুলো। দীর্ঘদিন জোটকে চাঙা করা বা শক্তিশালীকরণে ঢিমেতালে চলেছে বিএনপি। তবে আগামী সংসদ নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার দাবিতে আন্দোলনের ছক কষার পর জোটের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ নিরসনের গুরুত্ব পাচ্ছে বিএনপিতে।

২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশাপাশি কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল ও বামদলসহ আরো অনেককে নিয়ে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়তে বিএনপি কাজ শুরুর আগেই দীর্ঘদিনের সঙ্গী জোটকে আস্থায় নিতে চাইছে।

সরকার নিজেদের প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন ও পছন্দসই লোক দিয়ে কমিশন গঠন করবে এমনটি অনেকটাই নিশ্চিত হওয়ার পর বিএনপির পাশাপাশি ছোট দলগুলোও জোট গঠনে এগিয়ে আসছে। তবে এবার জোট গঠনে বেশ ‘কৌশলী’ বিএনপি কয়েকটি বাম দলের আপত্তির কারণে জামায়াতকে জোট থেকে বাদ না দিলেও আপাতত সামনে আনছে না।

গত শুক্রবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামীর আন্দোলন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করতে দুটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটির সদস্যরা কাজও শুরু করেছেন।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ১০ জনের মতো নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। রাতে নয়াপল্টনে গয়েশ্বর চন্দ্রের ব্যক্তিগত অফিসে এ বৈঠক হয়। বৃহৎ ঐক্য গঠনে গঠিত একটি কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক নেতা ভোরের আকাশকে বলেন, নির্দিষ্ট কোনো আলোচ্য বিষয় ছিল না ওই বৈঠকে। মূলত দীর্ঘদিন ২০-দলীয় জোটের কোনো বৈঠক হয়নি। তাই গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের আমন্ত্রণে তারা এই বৈঠকে অংশ নেন।

মূলত চা চক্র হলেও এই বৈঠকের ভিন্ন তাৎপর্য আছে বলে মনে করছেন খোদ জোট নেতাদের অনেকেই। বৃহত্তর জোট গঠন ও আগামীর আন্দোলন নিয়ে জোট নেতাদের মতামত নিতেই ওই বেঠকে নানা আলোচনা হয়েছে। জোট নেতারা গত সংসদ নির্বাচনের বিরূপ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কাছে।

বৃহত্তর জোট গঠনে তাদের সম্মতির কথা জানিয়েছেন জোট নেতারা। তবে মূল নেতৃত্ব যেন বিএনপির কাছে থাকে এবং জোট নেতাদের মূল্যায়নের ব্যাপারেও তারা বিস্তারিত কথা বলেছেন।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, ২০-দলীয় জোটের আমরা ১০ জনের মতো নেতা উপস্থিত ছিলাম। গয়েশ্বর চন্দ্র দাদা আমাদের সবাইকে চা-নাশতা খাইয়েছেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাসহ আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০-দলীয় জোটের এক নেতা বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামতে বৃহত্তর জোট গঠন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এ নিয়ে ২০-দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করায় জোটের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দেয়। তাই আজ জোট নেতাদের মান-অভিমান ভাঙাতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সবাইকে নিয়ে চা চক্র করেছেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, বিএনপি এ পর্যন্ত যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার কোনোটির বিষয়ে আগে ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়নি। এবার সেটা হবে বলে মনে হচ্ছে। বৈঠকের বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত আমীন বলেন, বৈঠক ভালো হয়েছে। অনেক দিন পর আমরা বৈঠকে বসেছিলাম।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি, গত শুক্রবারের বৈঠকের ব্যাপারে কথা বলতে নারাজ। তিনি বলেছেন, এটি কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল না। জোট নেতাদের সঙ্গে জাস্ট চা চক্র। এই বৈঠকের বিষয়ে মিডিয়াতে বলার মতো কোনো কিছু নেই।

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক আমরা এখনো করিনি। অনেক নেতাই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ঐকমত্য গড়তে কাজ শুরু করেছেন। কারো সঙ্গে যেকোনো রাজনৈতিক নেতার কথা হতেই পারে। তবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে বর্তমান সরকারের পতন ঘটনোর লক্ষ্যে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য

Beta version