-->

১০ জনের তালিকা বঙ্গভবন যাচ্ছে মঙ্গলবার

এম বদি-উজ-জামান ও শাহীন রহমান
১০ জনের তালিকা বঙ্গভবন যাচ্ছে মঙ্গলবার
বঙ্গভবন। ফাইল ছবি

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে ১০ জনের নামের চূড়ান্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে সার্চ কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দু-একটি বৈঠকে বসে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি সেই তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকেই একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চারজনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেবেন। তাদের অধীনেই পরিচালিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

এদিকে গতকাল শনিবার সার্চ কমিটি ২০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছে। এ বিষয়ে কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবিত ৩২২ জনের নাম থেকে কাটছাঁট করে ২০ জনের তালিকা করা হয়েছে।

এই তালিকা থেকে চূড়ান্ত ১০ জনের নাম বাছাই করা হবে। আরো দু-একটি বৈঠকেই চূড়ান্ত বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, তালিকা প্রস্তুত করতে আজ রোববার বেলা সাড়ে চারটায় কমিটি আবারো বৈঠকে বসছে।

গতকাল শনিবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে সার্চ কমিটি পঞ্চম দফায় নামের তালিকা বাছাই করতে বৈঠকে বসে। সুপ্রিম কোর্ট জাজেস লাউঞ্জে বেলা ১১টা থেকে বৈঠক শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে ২০ জনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব। তবে ২০ জনের তালিকা প্রস্তুত করা হলেও এদিন তালিকা প্রকাশ করেনি সার্চ কমিটি।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তালিকা প্রকাশ করা হবে কি না তা সার্চ কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, আরো দু-একটি বৈঠকেই ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হবে। এরপর যাবতীয় সব জানতে পারবেন। সে অনুযায়ী আজ আবার সার্চ কমিটির বৈঠকের কথা জানান তিনি।

এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করে ইসিতে নিয়োগের জন্য যোগ্য ব্যক্তি বাছাই করা হচ্ছে। গত ২৭ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২ সংসদে পাস করা হয়। এরপরই বিলে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ইসিতে নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেন।

সার্চ কমিটি তাদের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণে প্রথমে নিজের মধ্যে বৈঠক করেন। পরে দেশের বিভিন্ন পেশার ৫৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেন। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ ইসিতে নিয়োগে সৎ, যোগ্য সাহসী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিদের বাছাইয়ের কথা বলেন।

তারা মতামত দেন যে, আগামী নির্বাচন দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বিগত দুটি কমিশন দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচনে ভোটারের আস্থা ফেরানো বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সক্ষম ব্যক্তিদেরকেই ইসিতে নিয়োগে দিতে হবে।

আইন অনুযায়ী যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করে ১০ জনের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে সার্চ কমিটি। রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে যোগ্য বিবেচনায় একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং বাকি আরো চার কমিশনার নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতির কাছে চূড়ান্ত তালিকা তুলে দিতে সার্চ কমিটির হাতে সময় আছে আর মাত্র ৪ দিন।

অর্থাৎ আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন তুলে দেবে।

আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে কমিটির সদস্য হাই কোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী এবং সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি এই সার্চ কমিটি গঠনের পর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে মোট পাঁচ দফা বৈঠক করেছেন আর বিশিষ্টজনদের নিয়ে বসেছেন তিন দফা। একই সঙ্গে কমিটি ইসি গঠনে রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবীদের কাছ থেকে নাম প্রস্তাবের আহ্বান জানায়।

সে অনুযায়ী ইসির নিবন্ধিত ২৪টি রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে। প্রকাশিত তালিকায় অধিকাংশই ছিলেন অধ্যাপক, বিচারপতি, সাবেক সচিব, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। তবে আইনে প্রস্তাবিত তালিকা থেকেই নাম বাছাই করতে হবে এমন কোথা বলা নেই। ফলে সার্চ কমিটি এই তালিকার বাইরে থেকেও নিজস্ব বিরেচনায় তালিকা প্রস্তুত করতে পারে।

আইনে বলা হয়েছে, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে সার্চ কমিটি। আইনে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে নিয়োগের সুপারিশের ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, বয়স ন্যূনতম ৫০ বছর, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে।

সার্চ কমিটির ১০ জনের তালিকা থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়ে নতুন ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। যাদের অধীনে পরিচালিত হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনসহ ৫ বছর মেয়াদি বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন।

মন্তব্য

Beta version