বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির চার দিনব্যাপী দ্বাদশ কংগ্রেস শুরু হয়েছে আজ শুক্রবার সকালে। ‘দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও, বিকল্প গড়ো’- এ স্লোগান সামনে রেখে এবারের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। কংগ্রেসে অংশ নিতে সারা দেশ থেকে বেশিরভাগ নেতাকর্মী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যেই ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি চার বছর পরপর দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ঠিক করা হয় কংগ্রেস থেকে। এবারের সম্মেলনে কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে? এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আলোচনা যেমন আছে, তেমনি রাজনীতির মাঠেও কথাবার্তা চলছে সমানতালে। দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়েই আগ্রহ সবার।
সিপিরির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই মেয়াদের পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একই ব্যক্তি থাকতে পারবেন না। বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে থাকা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ইতোমধ্যে দুই মেয়াদ পার করেছেন। তবে স্বপদে থাকতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এজন্য সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধন করারও চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। যদি গঠনতন্ত্র সংশোধন হয়, তবে আগামী চার বছরের জন্য দলের সভাপতি থাকবেন তিনিই।
দলের আরেকটি পক্ষ গঠনতন্ত্র সংশোধনের পক্ষে নয়। এক্ষেত্রে সভাপতি হিসেবে নতুন একাধিক ব্যক্তির নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, দিবালোক সিংহ, সহিদুল্লাহ চৌধুরী।
তবে দলের ইতিহাস বলছে, বিগত দিনে যারা দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন পরবর্তীতে তিনিই সভাপতির পদ পেয়েছেন। এক্ষেত্রে নতুন সভাপতি হিসেবে শাহ আলমের নামও জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।
গঠনতন্ত্র সংশোধন না হলে সাধারণ সম্পাদকের ক্ষেত্রে এবার পরিবর্তন আনতে হবে। সংশোধন হলে শাহ আলমই নতুন কমিটিতে স্বপদে বহাল থাকতে পারেন। অন্যথায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাজ্জাত জহির চন্দন, রুহিন হোসেন প্রিন্স, আবদুল্লাহ ক্বাফি রতনসহ আরো কয়েকজনের নাম আলোচনা রয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও শহীদবেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অধিবেশনে পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, সহিদুল্লাহ চৌধুরী, শাহাদত হোসেন, নূরুল হাসান বক্তব্য রাখবেন। এছারা কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান লক্ষ্মী চক্রবর্তী স্বাগত বক্তব্য রাখবেন।
দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দ্বাদশ কংগ্রেসে গভীর সংকটে নিমজ্জিত দেশ রক্ষায় উপযুক্ত ও আদর্শনিষ্ঠ নীতি এবং রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা হবে। শুক্রবার (আজ) থেকে শুরু হওয়া সংগ্রেস শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।’
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে সারা দেশে পার্টির সব শাখা, উপজেলা কমিটি এবং জেলা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা কমিটিগুলোর সম্মেলনে ৪৮৭ প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে মোট ২২৯ জন ভেটারেন কমরেডকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
উদ্বোধনী সমাবেশের পর বিকেল ৩টায় সাংগঠনিক অধিবেশন শুরু হবে এবং চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত। সেদিনেই নতুন কমিটির ঘোষণা আসবে। কংগ্রেস চলাকালে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গণমাধ্যম কেন্দ্রে মুখপাত্ররা সংবাদ ব্রিফিং করবেন। কংগ্রেস চলাকালীন প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মহানগর নাট্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য শিল্পীরা অংশ নেবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মন্তব্য