দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা দেখছে না বিএনপি। তাই দাবি আদায়ে রাজপথের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। আন্দোলনের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়াচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছে রাজপথের এই বিরোধী দল।
দলটির নেতারা বলছেন তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দৃঢ়ভাবে মাঠে বিএনপি। একইসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ও চলমান ইস্যুতে আন্দোলনের গতি বাড়ানো হবে। একপর্যায়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ‘একদফা’ দাবিতে আন্দোলনে যাবেন তারা।
করোনায় সরকারি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে ১১ দিনের এই কর্মসূচি শুরু হয়। দেশব্যাপী ঘোষিত এই কর্মসূচি ১২ মার্চ পর্যন্ত চলবে। সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরতে ও জনরায় নিজেদের পক্ষে নিতে দলটির ৮১টি সাংগঠনিক জেলায় কর্মসূচি পালনে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্বও দেওয়া হয়।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাধা উপেক্ষা করেই বেশির ভাগ জায়গায় সমাবেশ করেছে বিএনপি। এর আগে থেকে গত বছরের শেষভাগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসার দাবিতে কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। একইসঙ্গে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর নড়েচড়ে বসে বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এখন সোচ্চার দলটি।
এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করে বিএনপি। এছাড়া রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির কাছে নামও দেয়নি দলটি।
বিএনপি বলছে, ইসি গঠন নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন করতে চায়। তবে তাদের এই দাবিকে হাস্যকর ও সংবিধান বিরোধী বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ দুই দলের বিভক্তি এখন স্পষ্ট। তাই বিএনপির সামনে রাজপথ ছাড়া আপাতত কোনো পথ খোলা নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে খোদ দলটির নেতাকর্মীরা। সে লক্ষ্যে বিএনপি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
দুটি বিষয়কে সামনে রেখে এগোচ্ছে বিএনপি। একটি হচ্ছে বর্তমান সরকারের অধীনে যে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় সে বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা। অন্যটি হচ্ছে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনা। ঐকমত্য গড়ে তুলে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে গত মাসে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির গঠিত দুই কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেছেন।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর নতুন কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। ভোটাধিকার হরণ, দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলার প্রতিবাদসহ ওই কর্মসূচিতে চলমান নানা ইস্যু যুক্ত হবে। ক্রমেই বিএনপির আন্দোলনে গতি বৃদ্ধি করা হবে। মাঠকে সক্রিয় রাখতে কর্মসূচি চলমান রাখার পাশাপাশি দল ও অঙ্গসংগঠনকে পুনর্গঠনের কাজও জোরালোভাবে করছে বিএনপি।
বিএনপি বলছে, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালে রাজনৈতিক গুম, খুন, গ্রেপ্তার, মামলা ও সভা-সেমিনারে বাধা দেওয়ার একটি ডকুমেন্টারি তৈরির কাজ শুরু করেছে দলটি। এটি দেশ-বিদেশের কূটনীতিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ারও পরিকল্পনার আছে বিএনপির। সরকারকে চাপে ফেলতে বিদেশি মিত্রদের কাজে লাগাতে সব ধরনের পলিসি গ্রহণ করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিএনপির কূটনৈতিক সফলতা বলেও অনেক নেতাই মনে করছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি মানবিক হিসেবে সামনে এনে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়াতে চায় বিএনপি।
এছাড়া একতরফা নির্বাচনের বিষয়ে কূটনৈতিকভাবেও সরকারকে চাপে রেখে আগামী নির্বাচন দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করতে তৎপরতা চালাবে বিএনপি। জানা গেছে, এসব বিষয়ে গত মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্যরা। সাম্প্রতিক ইস্যু ও আগামীর আন্দোলন নিয়ে দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতারাও একই কথা বলছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। তিনি বলেন, লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ^াস উঠেছে। মানুষকে বাঁচাতে ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি ও দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে সব ধরনের আন্দোলন করা হবে বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র নেই এটা শুধুমাত্র দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচিত। সুতরাং বিষয়টির কূটনৈতিক প্রভাব থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
মন্তব্য