ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংবিধান ও রাষ্ট্র ধ্বংসের অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এজন্য দলটির বিচার করা হবে। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজ) একাংশের বার্ষিক কাউন্সিলে তিনি এ কথা বলেন। কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পরিকল্পিতভাবে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। দেশে ছদ্মবেশী বাকশাল কায়েম করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজ প্রত্যেকটি আইন ও নীতিমালা করা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। সংবিধান ও রাষ্ট্র ধ্বংসের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার করা হবে।
দেশ রক্ষায় সরকার হটানোর বিকল্প নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সব রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। একজোট সম্ভব না হলেও যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হবে। কাজটা কঠিন হলেও আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে হটানো হবে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ যতদিন গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করবে ততোদিন সাহাবুদ্দীন আহমদকে স্মরণ করবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ৭ এর খ যে অনুচ্ছেদটি সংযোজন করা হয়েছে এটি হচ্ছে মত প্রকাশের জন্য সরাসরি আঘাত। সেখানে বলা হয়েছে, সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদ অপরিবর্তিত থাকবে। এগুলোকে নিয়ে কেউ যদি কোনো সমালোচনা করে তাহলে সে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হবে। মতপ্রকাশের এমন আঘাত কিন্তু অতীতের কোনো সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদেই ছিল না।
‘একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, আইসিটি এক্ট এবং বিটিআরসি কর্তৃক ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে তা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি,’ বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্বে ক্রস ওনারশিপ নামে একটা বিষয় আছে। অর্থাৎ যার পত্রিকা থাকবে তার কোনো টিভি চ্যানেল থাকতে পারবে না। তবে আমাদের এখানে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে পত্রিকার, টিভি চ্যানেল, রেডিও থেকে শুরু করে সব কিছু দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তারা সমাজে এক ধরনের প্রভুত্ব সৃষ্টি করেছে।
‘আমরা যে বলছি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে প্রতিহত করতে হবে। কিন্তু একটা বিষয় ক্লিয়ার করা প্রয়োজন গণঅভ্যুত্থান কিন্তু সাংবাদিকরা করবে না। এটা পেশাজীবী মানুষজন করবে এবং সেটাকে সাংবাদিকরা বহন করে সামনে নিয়ে যাবেন।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করে আমাদেরকে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার যে স্বপ্ন তা পূরণ করতে হবে।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, ‘বাংলাদেশ তার ৫০ বছর বয়সে এসে ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে ট্রেড বডি নির্বাচন পর্যন্ত মানুষ তার ভোটাধিকার হারাচ্ছে। এই বাস্তবতা আজ বাংলাদেশ চলছে।
‘এ কারণেই আমাদের আগে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। ৭৪ সালে বাংলাদেশের যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল সেই দুর্ভিক্ষের পুনরাবৃত্তি বর্তমানে আবারো হচ্ছে। তবে নতুন ফরমুলায়। আর তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মাধ্যমে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে এই সরকারের পতনের প্রয়োজন।’
মন্তব্য