দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে এখনই আন্দোলনের কোনো পরিকল্পনা নেই বিএনপির। তবে সরকারের মেয়াদ শেষের ঠিক আগ মুহূর্তে অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অল্পদিনের জন্য আন্দোলন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে দলটি। নেতারা বলছেন, আন্দোলন কখনো সময়ক্ষণ বেঁধে দিয়ে হয় না। যেকোনো সময় বিশেষ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের সক্ষমতা আছে তাদের। দলটির নেতারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আন্দোলনের ধুয়ো তুললেও এটাকে স্রেফ কর্মীদের মনোবল চাঙা করার কৌশল হিসেবে দেখছেন দলটির অনেক নেতাকর্মী। দল পুনর্গঠনের কথা মুখে বললেও শুধুমাত্র সময়ক্ষেপণই বিএনপির কৌশল।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের কঠোর মনোভাবে বেশ বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর অনেকটাই আশাহত হয়ে পড়ে বিএনপি। ওই নির্বাচনের আগে দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ হন। অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে দলটি।
নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলেও অনেকটাই একচেটিয়া নির্বাচনের ফলাফলে হতাশাব্যঞ্জক হয়ে পড়ে বিএনপি। তবে দলটি ঐক্যবদ্ধ থেকে ‘একলা চলো’ নীতিতে মাঠে থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। গত বছরের শেষ সময় থেকে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয় বিএনপি। বছরের শেষ সময় থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসার দাবিতে পালন করা কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম বিএনপিকে বেশ চাঙা করে তোলে দলটিকে। একইসঙ্গে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর নড়েচড়ে বসে বিএনপি।
আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে মাঠে নামতে বর্তমানে বেশ সক্রিয় দলটি। সে লক্ষ্যে বিএনপি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। দুটি বিষয়কে সামনে রেখে এগোচ্ছে বিএনপি। প্রথমটি হচ্ছে- বর্তমান সরকারের অধীনে যে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় সে বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী দলগুলোকে এক প্লাটফর্মে আনা। জনমত গড়ার অংশ হিসেবে নেতাকর্মীদের সরকারবিরোধী মনোভাব জোরালো করতে এই সরকারের অধীনে দলটি আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি গঠিত নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ ও রাষ্টপতি গঠিত সার্চ কমিটির সংলাপেও অংশ নেয়নি বিএনপি। সম্প্রতি প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা দ্রুত আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে কথাবার্তা বলছেন। কিন্তু আসলেই বিএনপি কী আন্দোলনে যাবে বা আন্দোলনের কোনো প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না?
এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে দৈনিক ভোরের আকাশ। তাদের বেশির ভাগই বলছেন- এখনই বিএনপি আন্দোলন করবে না। তবে প্রেক্ষাপট তৈরি করে বিশেষ করে তেল, গ্যাসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সরকারের নানা অনিয়ম দুর্নীতি জনগনের সামনে এনে জনরায় নিজেদের পক্ষে নিতে কাজ করছে বিএনপি। সম্প্রতি প্রতিটি কর্মসূচিতে ব্যাপক উপস্থিতি নিয়ে দলটি বলছে সাধারণ মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে নিয়ে একটা সময় অল্প দিনের তীব্র আন্দোলন করবে বিএনপি। এ আন্দোলনের লক্ষ্যে দলটি বৃহৎ ঐক্য গড়তেও কাজ করছে। সরকারের হাতে এখনো ক্ষমতা রয়েছে প্রায় দুই বছর। তাই দীর্ঘদিন আগে আন্দোলনে নেমে শক্তি ক্ষয় করতে চায় না বিএনপি।
আর নেতারা বর্তমানে দল পুনর্গঠন আর আন্দোলনের ফাঁকাবুলি দিয়ে কর্মীদের চাঙা রাখছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রতিদিন বিভিন্ন পর্যায়ের নতুন কমিটি হলেও খোদ বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক শাখার মধ্যে মাত্র ৫৬টির আহবায়ক কমিটি রয়েছে। তিন মাস মেয়াদি এসব কমিটির বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। এ মাসেই কয়েকটি জেলায় কাউন্সিল করার কথা। যেভাবে কমিটি গঠনের কাজ চলছে তাতে দীর্ঘদিনেও দল পুনর্গঠনের কাজ শেষ হবে না বলে মনে করছেন অনেকেই। অর্থাৎ দল পুনর্গঠনের পর আন্দোলনের যে কথা নেতারা বলছেন সেটিও অযৌক্তিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দুজন নির্বাহী কমিটির সদস্য বলেন, আসলে কর্মীদের চাঙা রাখতে দল অনেক সময় নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকে। বর্তমানে আন্দোলনের কথা বলাটা দলীয় কর্মীদের চাঙা রাখার কৌশল হতে পারে। তবে এখনই আন্দোলনের কোনো খবর তার কাছে নেই।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মরতাজুল করিম বাদরুর সঙ্গে। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, দল পুনর্গঠন চলছে এটি সঠিক। আবার বিএনপি আন্দোলন করছে এবং যেকোনো সময় তার তীব্রতা বাড়তে পারে এটিও সঠিক। দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না। বিএনপি আন্দোলনে আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলার বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিএনপির মতো এতো আন্দোলন কেউ আগে কখনো করেনি। এখনই আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, দল আন্দোলনে আছে। তবে দ্রুত আন্দোলনে যাবে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের যথেচ্ছ সক্ষমতা আছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির দ্রুত আন্দোলনে যাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন বক্তব্য সঠিক। কারণ এই সরকারের কাছ থেকে মানুষের মুক্তির জন্যে আন্দোলনই এমমাত্র ভরসা। সার্বিক পেক্ষাপট বিবেচনায় যেকোনো সময় বড় আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত রয়েছে বিএনপি।
মন্তব্য