-->

বিএনপির পরিকল্পনায় জাতীয় সরকার ঘোষণা জুনে

এম সাইফুল ইসলাম
বিএনপির পরিকল্পনায় জাতীয় সরকার ঘোষণা জুনে
বিএনপির লোগো

নির্বাচনের আগে নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনে জয়ের পর ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের কথা বলছে বিএনপি। দলটির নেতাদের এমন ঘোষণার বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন আলোচিত। কারা থাকবে জাতীয় সরকারে বা গঠন প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ জুনে ‘জাতীয় সরকারের রূপরেখা’ ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে এ সরকারের প্রতিনিধি বা তাদের আশীর্বাদপুষ্ট কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠিত হলে আগের অবস্থায় বিরাজ থাকবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়ের পর জাতীয় সরকার গঠন করতে চান তারা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এক হাতে জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো আর অন্য হাতে বামসহ সরকার বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়তে জোর তৎপরতা চালিয়ে আসছে বিএনপি। জামায়াতের ব্যাপারে কৌশলী বিএনপি চলতি বছরের শুরু থেকেই এ তৎপরতা শুরু করে। জাতীয় এক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল ও বামদলগুলোকে সরকার বিরোধী অবস্থানে নিতে ইতোমধ্যে প্রক্রিয়াও শুরু করেছে বিএনপি। গত মাসে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন দল ও ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠকও করে বিএনপির এ বিষয়ে গঠিত দুই কমিটি। কমিটির নেতৃত্বে থাকা দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠকের খবরও প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। শুরুতে বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছিল ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠনের কাজ। গত মাসে এ বিষয়ে রূপরেখাও ঘোষণা করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু হঠাৎ করেই এ প্রক্রিয়ায় গতিহীনতা দেখা দেয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে সখ্য আছে এমন কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের কথা বললেও বিএনপি তা চায় না। বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটসঙ্গীদের বাদ দিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের পক্ষে। সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কিছুদিনের জন্য জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকে নানা আলোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে বেশ কিছুদিন থেকেই গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা জাতীয় সরকার নিয়ে আলোচনা করে আসছিলেন।

কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নির্বাচনে আগে প্রয়োজনে শেখ রেহানাকে রেখে জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে কথা বলেন। এরপর বিএনপিতে সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকে। বিএনপি মনে করে, এ প্রক্রিয়ায় বর্তমান সরকারের হাত থাকতে পারে। বিএনপি ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠন প্রক্রিয়া বর্তমানে ‘জাতীয় সরকার’ ইস্যুতে হোঁচট খাওয়ার পর ইস্যুটি নিয়ে নতুনভাবে ভাবা শুরু করে বিএনপি। মহান স্বাধীনতা দিবসে উপলক্ষে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর থেকে দেশেও বিএনপি নেতারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা তারেক রহমানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলছেন, ভোগের আগে নয়, দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে অবাধ নির্বাচনে জয়ের পর তারা আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গীদের বাদ রেখে সব দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে চায় বিএনপি।

জাতীয় সরকারে কারা থাকবে, কোন প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করা হবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ করছে বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ একাধিক নেতা লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে তারেক রহমানে সঙ্গে তাদের বিস্তারিত কথা হবে বলেও জানা গেছে। দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, তারেক রহমানের ‘প্রেসক্রিপশন’ নিয়ে নেতারা দেশে ফেরার পর তারা মিত্রদের সঙ্গে কথা বলবেন। বিশেষ করে আসন্ন রমজানে ইফতার পার্টির অন্তরালে অনেকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন বিএনপি নেতারা। তারপর জুনে জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করা হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে ভোরের আকাশের সঙ্গে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর। তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের প্রতিনিধি রেখে কোনো জাতীয় সরকার হতে পারে না। কারণ আমরা চাইছি দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। দিন শেষে সবাই মিলে একটা ভালো পথ বের করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করে তাদের সঙ্গে থাকা সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করতে চায় বিএনপি। বিষয়টি সময়মতো জাতির সামনে স্পষ্ট করা হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি কোনো অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে নয়। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগে ভোট পরে সরকার গঠনের বিষয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আমরা বৃহৎ ঐক্যের পক্ষে কাজ করছি।

মন্তব্য

Beta version