বিএনপির জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দলটির মিত্ররা। বিশেষ করে যারা জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে কথা বলছিলেন, তারাও দলটির ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন।
নির্বাচনের আগে নাকি পরে জাতীয় সরকার গঠন হবে, তা নিয়ে সংকট নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের হয়ে আসবে বলেও বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা আশা প্রকাশ করছেন।
বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ও মিত্ররা ইতিবাচক হওয়ায় বিএনপির আগামী দিনের আন্দোলনে গতি পাবে বলেও ধারণা করছেন অনেকেই।
জানা গেছে, জাতীয় এক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল ও বাম দলগুলোকে সরকারবিরোধী অবস্থানে নিতে বেশ আগে থেকে প্রক্রিয়া চালিয়ে আসছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করে বিএনপি।
বেশ দ্রুতগতি চলছিল বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। গত মাসে এ বিষয়ে রূপরেখাও ঘোষণা করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু হঠাৎ করেই এ প্রক্রিয়ায় গতিহীনতা দেখা দেয়।
মূলত বিএনপির সঙ্গে সখ্য আছেন এমন কয়েকটি দল বা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের একটি অংশ নির্বাচনকালীন ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের বিষয়টি সামনে আনলে বিএনপির ঐক্য প্রক্রিয়ার গতিতে ভাটার সৃষ্টি হয়।
বিশেষ করে বেশ কিছুদিন থেকেই গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা জাতীয় সরকার নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নির্বাচনে আগে প্রয়োজনে শেখ রেহানা রেখে জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে কথা বলেন। এরপর সন্দেহের দানা বাঁধা বিএনপিতে। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠন প্রক্রিয়ায় ‘জাতীয় সরকার’ ইস্যুতে হোঁচট খাওয়ার পর এ ইস্যুতে নতুনভাবে ভাবা শুরু করে বিএনপি।
মহান স্বাধীনতা দিবসে উপলক্ষে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর থেকে দেশেও বিএনপি নেতারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন।
গত বুধবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা তারেক রহমানের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। ভোটের আগে নয়, দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে অবাধ নির্বাচনে জয়ের পর তারা আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গীদের বাদ রেখে সব দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে চায় বিএনপি।
দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তারেক রহমানের ‘প্রেসক্রিপশন’ নিতে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ তিন নেতা লন্ডন সফর করছেন। নেতারা দেশে ফিরে তারা মিত্রদের সঙ্গে কথা বলবেন।
বিশেষ করে আসন্ন রমজানে ইফতার পার্টির অন্তরালে অনেকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন বিএনপি নেতারা। তারপর জুনে জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করা হতে পারে।
রাজনৈতিক সভা সমাবেশে যে যাই বলুক না কেন, বিএনপি তথা ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অনেকেই; এমনকি যারা জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে কথা বলছিলেন, বিএনপির জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণার পর তারা কী ভাবছেন?এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে কথা হয় দৈনিক ভোরের আকাশের। তারা বিএনপির জাতীয় সরকারের ঘোষণাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জেএসডি সভাপতি আবদুর রবের সঙ্গে। তিনি বলেন, জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা অনেকের মধ্যে তিনিই প্রথম দিকে দিয়েছেন। দলীয় সরকারের বদলে আরেকটি দলীয় সরকার চান না তিনি।
বিএনপির ঘোষণাকে তিনি সাধুবাদ জানান। তবে নির্বাচন কীভাবে হবে, আগামীর আন্দোলন কী হবে, তা সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা যাবে বলে আশাবাদ তার।
এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় সরকার নির্বাচনের আগে নাকি পরে সেটাও আলেচনা করে সমাধান বের করা যাবে।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরও বিএনপির জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, আগে এ সরকারের পতন পরে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা কথা বলছি।
আন্দোলন করছি। বাম মোর্চার সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আগে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। এ সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর জন্য জাতীয় ঐকমত্য দরকার। এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত।
এ ছাড়া আন্দোলন, সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় ২০ দলীয় জোট নেতারা আগেই বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। ২০ দলের নেতারাও জাতীয় সরকার গঠনে শতভাগ ইতিবাচক।
বিএনপির জাতীয় সরকার গঠন পরিকল্পনায় আগামীর আন্দোলনে আরো গতি আসবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর এ বিষয়ে বলেন, দলের এ ঘোষণাকে দলীয় নেতাকর্মী; এমনকি সাধারণ মানুষ খুব ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন।
আগামীর সব কর্মসূচিতে যার প্রতিফলন হবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, এ সরকারকে বিদায় করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়ের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকা সবাইকে নিয়েই বিএনপি সরকার গঠন করতে চায়।
মন্তব্য