চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আওয়ামী যুবলীগের পক্ষ থেকে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগেরও নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী জুন মাসে সম্মেলন করে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গত ২৬ মার্চ যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এই তিন সাংগঠনিক জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের ২ থেকে ৫ এপ্রিলের মধ্যে যুবলীগের দপ্তরে জীবন বৃত্তান্ত, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও সর্বশেষ শিক্ষা সনদের ফটোকপি জমা দিতে বলা হয়েছে। তাতে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে।
শুধু চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগেরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ১০৫ জন নেতা তাদের জীবন বৃত্তান্ত, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও সর্বশেষ শিক্ষা সনদেও ফটোকপি জমা দিয়েছেন। অর্থাৎ, শুধু চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়েই রয়েছেন এই ১০৫ জন নেতা! এছাড়াও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে চান ২৬ জন নেতা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ৪৬ জন। সব মিলিয়ে এই তিন সাংগঠনিক জেলা থেকে যুবলীগের দপ্তরে জীবন বৃত্তান্ত, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও সর্বশেষ শিক্ষা সনদের ফটোকপি জমা দিয়েছেন ১৭৭ জন নেতা।
এ প্রসঙ্গে যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে ১০৫টি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ও সেক্রেটারি পদের জন্য। সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলাসহ তিন ইউনিটের জন্য সর্বমোট জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে ১৭৭টি। এখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা সেগুলো যাচাই বাছা শেষে পরবর্তী সময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।’
আরো পড়ুন: ৯ বছর পর হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি
এর আগে ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সে সময় ঈদের পর মে থেকে জুনের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এই তিনটি সাংগঠনিক ইউনিটে ধারাবাহিকভাবে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার ইঙ্গিত দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এরপর থেকেই চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নতুন কমিটিতে পদ পেতে নতুন-পুরোনোদের মধ্যে অনেকে তৎপরতা শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে যুবলীগের বর্তমান কমিটির সদস্য যেমন রয়েছেন, তেমনি ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও আছেন। তবে কমিটিতে পদ পেতে হলে বয়সসীমা ৫৫ বছর আগেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সর্বশেষ যুবলীগের সম্মেলন হয়েছে ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালের অক্টোবরে। ওই সম্মেলনের পর যুবলীগ নেতা চন্দন ধরকে সভাপতি ও মশিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৪ সালের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় কেন্দ্র থেকে। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সাবেক মেয়র মরহুম এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী মহিউদ্দিন বাচ্চুকে।
এছাড়াও চারজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। তারা হলেন দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, মাহাবুবুল হক সুমন ও দিদারুল আলম। সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর অনুসারীর নেতারাই মূলত স্থান পান ১০১ সদস্যের ওই কমিটিতে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে মাত্র সাতজন স্থান পান ওই কমিটিতে। এ কারণে ওই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর চট্টগ্রাম মহানগরীতে যুবলীগের কোন্দল চরম আকার ধারণ করে।
এদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুনকে সভাপতি এবং হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয়েছিল সেই কমিটি।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০১০ সালে। আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীকে সভাপতি এবং পার্থ সারথি চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা সেই কমিটি পার করেছে এক যুগ!
মন্তব্য