-->

নির্বাচনে আনতে সরকারের নতুন কৌশল, সতর্কাবস্থানে বিএনপি

এম সাইফুল ইসলাম
নির্বাচনে আনতে সরকারের নতুন কৌশল, সতর্কাবস্থানে বিএনপি

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বর্তমান সরকারের নতুন কৌশল সম্পর্কে সতর্কাবস্থানে বিএনপি। দলটির নেতারা সভা-সমাবেশেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। সরকারের কৌশল আর লোভনীয় অফারে যেন কোনো নেতা দলীয় অবস্থান থেকে দূরে সরে না যান, সে ব্যাপারে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামেও আলোচনা হয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে অনড় তাদের দল। বর্তমান সরকারের কোনো অফারই তাদের স্পর্শ করতে পারবে না। তারপরও তারা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন।

জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকি রয়েছে প্রায় দেড় বছরের বেশি। তারপরও রাজনীতির মাঠ এখন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে। ঈদের পর থেকে শুরু হয়েছে রাজনীতির নানা মেরুকরণ। বিশেষ করে গত রোববার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনীতির মাঠে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে আগামীতে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিকে কোনো সভা সমাবেশে বাধা প্রদান না করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে। এছাড়া বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক মনোভাবে নতুন ভাবনার জন্ম হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ কয়েক নেতাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে।

প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিএনপি নেতারা সঙ্গে নিয়মিত য়োগাযোগ করবেন। তারা বিএনপি নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। এছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসারও সম্ভবনা রয়েছে বলে প্রবাভিত করা হবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সব ধরনের কৌশল নেবে আওয়ামী লীগ। এ ধরনের খবর প্রকাশের পর বিএনপি নেতারা এখন বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতাদের এখন বিষয়টি নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ হামলা মামলার শিকার বিএনপির কোনো নেতা যে লোভে পড়বে না, তার শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া কঠিন। তাছাড়া দলটি যে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে বা আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারাবে, তেমন কোনো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। তাই এ বিষয়ে বিএনপি নেতারা সতর্কাবস্থানে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন।

গতকাল সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গেলে প্রতারণার ফাঁদে পড়তে হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা যা বলছেন, তা মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।

বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ভোরের আকাশকে বলেন, সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সম্প্রতি বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকারি কৌশলের যেসব বিষয় গণমাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে উঠে এসেছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব ব্যাপারে নেতারা নিজেরা সতর্ক থাকার পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক রাখার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের লোভনীয় অফারের ব্যাপারে নিজ নিজ জায়গায় সতর্ক থেকে দলীয় অবস্থানে অনড় থাকতে বলা হয়েছে, স্থায়ী কমিটির সভায়। কৌশলগত কারণে বিএনপির ওই স্থায়ী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ করতে চাননি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসার পর থেকে বিএনপিকে ভাঙার নানা চেষ্টা করেছে। কিন্তু সে চেষ্টায় তারা ব্যর্থ। এখন আগামী নির্বাচনে বিএনপি ভোটে নিতে আওয়ামী লীগ নানা কৌশল আর ফন্দি ফিকির করছে। এতে কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না এটি স্পষ্ট। দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে বৃহত্তর ঐক্য ও যুগপৎ আন্দোলনের প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত তারা। এছাড়া আগামীতে জাতীয় সরকার গঠনের রূপরেখা নিয়েও কাজ চলছে। বিএনপিকে কোনো লোভ বা অফার দেখিয়ে লাভ নেই বলে জানান তিনি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপি নেতারা দলীয় সিদ্ধান্তে অনড়। বর্তমান সরকারের কোনো অফারে বিএনপির কোনো নেতা পথভ্রষ্ট হবেন না বলে বিশ্বাস করেন তিনি। তারপরও এ ব্যাপারে বিএনপি সতর্কাবস্থানে থাকবে।

মন্তব্য

Beta version