-->
শিরোনাম

ইভিএম নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন

# ইসি বলছে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি # সব আসনে ইভিএম ব্যবহারে দক্ষ জনবল নেই # বিশেষজ্ঞরা ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষেই কথা বলেছেন

শাহীন রহমান
ইভিএম নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন

আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন উত্তপ্ত। ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। বিএনপি শুরু থেকেই ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে কথা বলছে।

তারা বলছে, ইভিএমে সূক্ষ্ম কারচুপির সুযোগ রয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বরাবরই ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা চায়, আগামী নির্বাচনে সব আসনেই ইভিএম ব্যবহার করেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনী কৌশলে তারা ইভিএম ব্যবহারকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

বিএনপির বিরোধিতা সত্ত্বেও গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দৈব্যচয়নের ভিত্তিতে বেশ কিছু আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। যদিও এখন পর্যন্ত দেশে ব্যাপক পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করেনি ইসি।

আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ভোট ইভিএমে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া দেশে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনেও আংশিকভাবে ইউভিএম ব্যবহার করা হয়েছে।

এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে সব আসনে ইভিএম ব্যবহার সম্ভব কি না তা নিয়েও খোদ ইসিতে দ্বিমত রয়েছে। যদিও ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে, সব আসনের ইভিএম ব্যবহার করার মতো দক্ষ জনবল এবং ইভিএম মেশিন ইসির কাছে নেই।

আগামী নির্বাচনে সব আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে সম্প্রতি ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

তারা বলেছেন, ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। ইসির উচিত হবে এই মুহূর্তে ইভিএম ব্যবহার না করা। তারা জানানা, ইভিএমে ভোট পুনর্গণনার সুযোগ নেই। কিন্তু ভারতে নির্বাচনে একজন ভোটার ভোট দেয়ার পাশাপাশি তাকে একটি স্লিপও দেয়া হয়। ইভিএমে ভোটের একটি প্রিন্ট কপিও থাকে। এর মাধ্যমে তারা ভোট পুনর্গণনা করা সম্ভব হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ইভিএমের ভোটের এখনো সেই সক্ষমতা তৈরি হয়নি।

এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইভিএমে ভোট করলে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। এ ছাড়া ইভিএমে কারচুপির সুযোগ রয়েছে বলে ইসি সংলাপে অংশ নিয়ে তারা এই মতামত ব্যক্ত করেছেন।

এদিকে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে এখন দেশের সব আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণে প্রস্তুত নয় ইসি।

তারা বলছে তাদের হাতে থাকা ইভিএম মেশিন দিয়ে সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ আসনের ভোট করা সম্ভব। এর বাইরে ইভিএম ভোট নিতে হলে প্রশিক্ষিত জনবল বাড়াতে হবে কয়েক গুণ।

সেই সঙ্গে নতুন ইভিএম মেশিন কেনার জন্য লাগবে বাড়তি বাজেট। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ইভিএম ব্যহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের এক অনুষ্ঠানে সিইসি ইভিএম ব্যবহারের প্রসঙ্গ তুলে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কত আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে সে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা নেই। এ বিষয়ে ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত শুনবে।

তবে কত আসনে ইভিএমে ভোট হবে বা নির্বাচন কীভাবে হবে- সে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনই নেবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব কমিশনের। এখন পর্যন্ত একশর মতো আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা ইসির আছে। তবে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সামর্থ্য এখনো নেই। ৩০০ আসনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো ইসি নেয়নি। সিদ্ধান্ত আমাদের। সকলের কথা আমরা বিবেচনা করতে পারি। রাজনৈতিক দল মতামত দিতে পারে, সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে আমরা স্বাধীন। আমরা ইতোমধ্যে অনেকগুলো সভা করেছি। সময় হলে সিদ্ধান্ত হবে। ভোট আমরা পরিচালনা করব, এটা আমাদের এখতিয়ার, পদ্ধতিও আমাদের এখতিয়ারভুক্ত।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের এক সভায় আগামী নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু) হবে। ইভিএমে ভোট হবে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকবে।

যদিও আওয়ামী লীগের এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ইভিএম তো পরের কথা, শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি নির্বাচনেই যাবে না।

এদিকে জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব নির্বাচনের ইভিএম ব্যবহারকে সরকারের দুরভিসন্ধি হিসেবে মনে করেছেন।

তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া নয় বরং ক্ষমতা ধরে রাখা সরকারের নতুন ফন্দি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত রাষ্ট্রকে নতুন করে বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত করবে। শুধুমাত্র ক্ষমতাকে আঁকড়ে থাকার উম্মাদনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

আওয়ামী লীগের দলীয় সভায় ইভিএমে ভোট গ্রহণের আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমাদের দেশে এখনো প্রার্থীর নামের পাশে প্রতীক ব্যবহার করতে হয়। এমন বাস্তবতায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে।

মন্তব্য

Beta version