-->
শিরোনাম
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচল

দুই দিনের বাজার মূলধন কমল ৭ হাজার কোটি টাকা ৭

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
দুই দিনের বাজার মূলধন কমল ৭ হাজার কোটি টাকা ৭
বছরের শুরুতে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ালেও তা স্থায়ী হয়নি। কিছুদিন পর আবারো পতন নেমে আসে। যার জের ধরে বিনিয়োগকারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরবর্তী সময়ে ঈদের কিছুদিন আগে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় পুঁজিবাজার। এতে আশাবাদী হয়ে ওঠেন ভুক্তভোগীরা।
 
তাদের প্রত্যাশা ছিল ঈদের পর বাজার চাঙ্গা হবে। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টো। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমছে। সর্বশেষ দুই দিনের দিনের পতনে বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। এতে বিচলিত হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগ নিয়ে পড়েছেন দোলাচলে। লাভের বদলে প্রতিদিনই লোকসানের হিসাব কষছেন তারা।
 
সাম্প্রতিক বাজার চিত্রে দেখা যায়, দিন দিন পরিস্থিতি আরো নাজুক হচ্ছে। মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করে দেখতে হচ্ছে উল্টো চিত্র। কাজে আসছে না কোম্পানির ইপিএস, পিই-রেশিও কিংবা শেয়ারপ্রতি সম্পদের হিসাব। কোনো ব্যাকরণেই মিলছে না হিসাব। সব মিলে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। আতঙ্কে ভুগছেন ছোট-বড় সব শ্রেণির বিনিয়োগকারী। এ পরিস্থিতিতে এখন তাদের কি করা উচিত তা বুঝতে পারছেন না কেউ-ই।
 
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত দুই দিনের পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফান্ডের বাজার মূলধন কমে গেছে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। কারণ এই দুই দিনই লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিংহভাগ শেয়ারের দরপতন হয়েছে।
 
এই সময়ে দর পতন হতে দেখা গেছে, বহুজাতিক কোম্পানিসহ বড় বড় বাজার মূলধনধারী কোম্পানির শেয়ারে। যার বৈরী প্রভাব পড়েছে মোট বাজার মূলধনে। গত দুই কার্যদিবস আগে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ও ফান্ডের শেয়ার দুই দিনের পতনে বাজার মূলধন এবং ইউনিটের মোট বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। পরের দিন বাজার মূলধন ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি কমে হয় ৫ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
 
এর পরের দিন অর্থাৎ গতকালও বাজার মূলধন ২ হাজার কোটি টাকা কমে যায়। গতকাল দিন শেষে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা।
 
এদিকে দুই দিনের পতনে ডিএসইর প্রধান সূচক কমে গেছে ১০০ পয়েন্ট। দুই কার্যদিবস আগে ডিএসইর প্রধান সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৬৬৫ পয়েন্ট। গতকাল তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৬৫ পয়েন্ট।
 
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ভুক্তভোগীরা জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কেউই। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের চেয়ে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণসহ নতুন-পুরোনো সব বিনিয়োগকারী। ক্যাপিটাল গেইনের আশায় বিনিয়োগ করে বড় ধাক্কা খেয়েছেন তারা। এখন এ বাজার ছেড়ে বের হয়ে যাবেন, তারও কোনো উপায় নেই।
 
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসই'র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজার হয়ে পড়েছে গুজব ও খবরনির্ভর। বর্তমানে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রায় সবারই লোকসান গুনতে হচ্ছে। “কিছু চক্র ইচ্ছা করেই এমন করছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চক্রগুলো কৌশলে গুজব ছড়িয়ে একটি একটি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়াচ্ছে। ফলে মৌলভিত্তির বিচার ছেড়ে সবাই ঝুঁকে পড়ছেন এসব শেয়ারের দিকে। খেলা শেষ হয়ে গেলে চক্ররা আবার বের হয়ে যাচ্ছে। এসবের প্রভাবে বাজার গতি ফিরে পাচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে বাজারের ভবিষ্যৎ আরো করুণ হতে পারে।'
 
একই বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে এখন যে পরিস্থিতি চলছে তা কাম্য নয়। কারণ বাজারে বেশিরভাগ শেয়ারই বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। তারপরও কেন এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। তবে এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ভেঙে পড়লে চলবে না। ভয় পেয়ে শেয়ার বিক্রি করেও দেওয়াও ঠিক হবে না। যে কোনো পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে টিকে থাকাই বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ।
 
এদিকে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাজার কারেকশন বা শেয়ারের দর সংশোধন হবে এটা স্বাভাবিক। সেজন্য তারা মানসিকভাবে প্রস্তুতও থাকেন। কিন্তু এর বদলে পুঁজিবাজারে এমন পতন নেমে আসবে তারা ভাবতে পারেননি। তাদের মতে, বাজার খেলোয়াড়রা আবারো সক্রিয় হয়েছেন। তারাই বাজার নিয়ে খেলছেন। আর এ কারণেই বাজার তার স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। বাজারের লাগাম টেনে ধরার জন্য তারা সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান।

মন্তব্য

Beta version