বড় দুই রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল।
এ সুযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ দলের নেতাকর্মীদের উসকানি দিচ্ছেন। তারা বলছেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদল ঘরে ফিরবে না।
তেমনি দলের বিদেশে থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত এক শীর্ষ নেতাও সম্প্রতি দেওয়া বক্তব্যে বাংলাদেশে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে লাশ ফেলার কথা বলেছেন- এমন অভিযোগ করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তিসহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজনীতির মাঠে বিএনপি উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা করলেও কৌশলী অবস্থানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
সূত্রে জানা গেছে, ইস্যুবিহীন কর্মসূচি দিয়ে দেশে সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আবারো কঠোর অবস্থানে যেতে পারে সরকার।
প্রয়োজনে বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে কারাগারে পাঠানো হতে পারে। গত তিন দিনে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য থেকে বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেহেতু খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, সেক্ষেত্রে তাকে কারাগারে আবারো পাঠানো আইনবহির্ভূত কোনো বিষয় নয়।
যথাযথ আইন অনুসরণ করেই তাকে কারাগারে পাঠানো সম্ভব বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা। কারণ সরকারপ্রধানের বিশেষ ক্ষমার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে আবারো কারাগারে পাঠানো এটি হলো ক্ষমতাসীন দলের শেষ অস্ত্র। দলের নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে দুর্বল করতেই তাকে কারাগারে পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
তবে এ মুহূর্তেই এত বেশি কঠোর অবস্থানে যেতে চায় না আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তত আন্দোলনমুখী হতে পারে বিএনপি।
শেষমেশ পরিস্থিতি একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে রাজনীতির শেষ অস্ত্রটি প্রয়োগ করবে টানা তিন মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগ। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলে খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়।
করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত চার দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় বৃদ্ধি করা হয়। যদিও বিএনপির নেতারা এ সাময়িক মুক্তিকে ‘গৃহবন্দি’ বলছেন।
খালেদা জিয়ার পরিবার ও দল তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছে। কারামুক্তির পর গুলশানের ভাড়া বাসায় ওঠেন তিনি।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে এবং সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে না’- দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একটা অশুভ পরিস্থিতি তৈরি করার প্রাণান্তকর অপপ্রয়াস লক্ষ করছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কথিত গণআন্দোলন সৃষ্টি করে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক রহমানকে টেমস নদীর ওপার থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে খোমেনি স্টাইলে বিপ্লব করার দুঃস্বপ্ন দেখছে বিএনপি।
গণআন্দোলনের নামে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা করছে বিএনপি। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের শাসনামলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একসময় বলেছিলেন বিরোধী দলকে ঠেকানোর জন্য ছাত্রদলই যথেষ্ট।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার এটুকু কথা, বাধা এলে পাল্টা বাধা দিতে হবে। আক্রমণ হলে পাল্টা আক্রমণ করতে হবে।
পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে তাদের প্রতিহত করতে হবে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘আক্রমণের বিপরীতে পাল্টা আক্রমণ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। মার খাওয়া একমাত্র কাজ নয়।
রক্ত দিয়ে প্রতিবাদের খাতায় নাম লেখালে হবে না। জনগণের বিপক্ষে কথা বললে প্রয়োজনে কারও রক্ত দিয়ে বাধা দিতে হবে।’
বিএনপি নেতারা যখন সরকার পতনের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের উসকে দিচ্ছেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে বিরোধী নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক করা হচ্ছে।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া মুক্ত আছেন উল্লেখ করে বলেন, তার দণ্ড স্থগিত করে যেহেতু মুক্তভাবে জীবনযাপন করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, সুতরাং দেশে বিএনপির নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে এবং দেশে অগ্নিসন্ত্রাস নৈরাজ্যের মতো ঘটনা ঘটলে তার দায় দায়িত্ব বেগম জিয়ার ওপরও বর্তায়।
তিনি বলেন, তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর বর্তায় তো বটেই, বেগম জিয়ার ওপরও বর্তায়। সেজন্যই প্রশ্ন এসেছে, বেগম জিয়াকে এভাবে বাইরে রাখার প্রয়োজন আছে কিনা।
সেজন্যই অনেকে দাবি তুলেছেন, তাকে আবার কারাগারে পাঠানোর। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) যদি প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা অনুধাবন করতে না পারে, যে মহানুভবতার কারণে খালেদা জিয়া কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হলেও আজকে বাইরে মুক্ত জীবনযাপন করছেন।
এখন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী, ভাবতে হবে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো যায় কিনা। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেদিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায়ও তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ প্রথম দফায় দণ্ড স্থগিত করার পর তিনি কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি পান।
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। প্রথমে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিলেও পরে অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতাল এভারকেয়ারে ভর্তি করা হয়েছিল।
এরপর তাকে দেশের বাইরে নেওয়ার দাবি তুলে বিএনপি। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যেতে সরকার অনুমতি দেবে না।
মন্তব্য