-->
সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস

১৮ বছর পর চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন আজ

সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে চান ১০৭ নেতাকর্মী!

রুবেল খান, চট্টগ্রাম
১৮ বছর পর চট্টগ্রাম মহানগর
যুবলীগের সম্মেলন আজ
প্রতীকী ছবি

অবশেষে ১৮ বছর পর আজ সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস।

সেইসঙ্গে গত এক সপ্তাহ ধরে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। শীর্ষ পদ-প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর বিভিন্ন সড়ক, আইল্যান্ড, ডিভাইডার ও গোল চত্বর।

কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে মরিয়া হয়ে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রতাশীরা।

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের পক্ষ থেকে এই সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে এই সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নাকি কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোনীত হবেন তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

কারণ গত ২৮ মে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও নতুন কমিটি ঘোষিত হয়নি। কেন্দ্রীয় যুবলীগের পক্ষ থেকে পরে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

একইভাবে গত রোববার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে নতুন কমিটি ঘোষণা ছাড়াই।

আজ চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। এতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপিসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সিনিয়র নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির নেতাকর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের বর্তমান আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘সম্মেলন সার্বিকভাবে সফল করতে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। দীর্ঘদিন পর এই সম্মেলন নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রত্যাশার সৃষ্টি করেছে।

এবারের সম্মেলনে সৎ এবং দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা মূল্যায়িত হবেন বলে আমরা আশা করছি।’

এদিকে এই সম্মেলনের আগে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী নেতাদের কাছ থেকে গত ২৬ মার্চ কেন্দ্রীয় যুবলীগের পক্ষ থেকে জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়।

এতে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য ১০৭ জন নেতা কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তরে নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।

জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়া নেতাদের মধ্য থেকেই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত কিংবা মনোনীত করা হবে।

কে আসছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নতুন নেতৃত্বে তা আগাম বলার সুযোগ নেই।

তবে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এমআর আজিম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য দেবাশীষ পাল দেবু, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও সাবেক ছাত্র নেতা হাসান মুরাদ বিপ্লব এবং চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক দিদারুল আলম চৌধুরী এবং বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন।

প্রসঙ্গত, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সর্বশেষ যুবলীগের সম্মেলন হয়েছে ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালের অক্টোবরে। ওই সম্মেলনের পর যুবলীগ নেতা চন্দন ধরকে সভাপতি ও মশিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

২০০৪ সালের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয় কেন্দ্র থেকে। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সাবেক মেয়র মরহুম এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী মহিউদ্দিন বাচ্চুকে।

এ ছাড়াও চারজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। তারা হলেন দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, মাহাবুবুল হক সুমন ও দিদারুল আলম।

সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর অনুসারীর নেতারাই মূলত স্থান পান ১০১ সদস্যের ওই কমিটিতে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে মাত্র সাতজন স্থান পান ওই কমিটিতে।

এ কারণে ওই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর চট্টগ্রাম মহানগরীতে যুবলীগের কোন্দল চরম আকার ধারণ করে।

সাবেক মেয়র মরহুম এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপ ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গ্রুপের কোন্দলের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই স্থবির রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের রাজনীতি।

এই কোন্দলের কারণেই ৯ বছর পরও পূর্ণতা পায়নি চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি। ওই আহ্বায়ক কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় যুবলীগের সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু পদ-পদবি নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল এতটাই চরম পর্যায়ে গিয়েছিল যে, বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় এতদিন সম্মেলনেরই আয়োজন করা যায়নি।

মন্তব্য

Beta version