-->
শিরোনাম

সামনে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ পেছনে বিএনপি

এম সাইফুল ইসলাম
সামনে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ পেছনে বিএনপি

আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতটি দল বা সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা। কী উদ্দেশ্যে এই মঞ্চ তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। এই মঞ্চের নেতৃত্বে থাকা সাবেক মন্ত্রী আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হক বা নুরুল হক নুরদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সখ্যতা বিএনপির। তাছাড়া ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’-এ থাকা একাধিক দলের সঙ্গে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক সংলাপও শুরু করেছে বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে ভিন্ন মঞ্চ থেকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’-কে বিএনপি মাঠে নামিয়েছে বলে এখন অনেকেই ধারণা করছেন।

-বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে আপত্তি নেই: মান্না

-রাজপথে অবস্থানকারীদের সঙ্গে থাকবে বিএনপি: আমীর খসরু

তবে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, শুধুমাত্র নির্বাচন নয়, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে কাজ করবেন তারা। সেক্ষেত্রে বিএনপিসহ কারো সঙ্গে মতের মিল হলেও একসঙ্গে কাজ করতে সমস্যা নেই। আর বিএনপি নেতারা বলছেন, গণতন্ত্র উদ্ধারে যারা রাজপথে থাকবেন তাদের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য হবে।

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে এখন নানা মেরুকরণ শুরু হয়েছে। নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও নির্বাচনের আগেই ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সবশেষ ২৯ মে সাতটি দল বা সংগঠনের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের রাজধানীর উত্তরার বাসায় বৈঠক থেকে এই মঞ্চ গঠনের ঘোষণা আসে।

বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে বেরিয়ে আসা জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন ও সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে আরো পাঁচ দল ও সংগঠন মিলে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামের এই জোট গঠিত হয়েছে। এই জোটে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ও নুরুল হকের গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নামে সংগঠন রয়েছে। ভাসানী অনুসারী পরিষদে যুক্ত আছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই জোটের নেতারা সরকারের বিপক্ষে মাঠে-ময়দানে বক্তব্য দিচ্ছেন।

জানা গেছে, নতুন গঠিত জোটের বেশির ভাগ নেতা বেশ দীর্ঘদিন থেকে সরকারবিরোধী অবস্থানে আছেন। তাদের মধ্যে আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না গত নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেও ছিলেন। এই ঐক্যফন্টে বিএনপিও যুক্ত ছিল। গত নির্বাচনের পর ঐক্যফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় হলেও তারা রাজপথ, সভা-সেমিনারে বিএনপির সঙ্গেই আছেন।

এছাড়া গত ২৫ মে বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেন জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন ও সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। তথ্য বলছে, সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি দীর্ঘদিন থেকেই বর্তমান সরকারের বিপক্ষে মাঠে আছেন। তাদের সঙ্গে বিএনপির সখ্যতার বিষয়টি এখন দৃশ্যমান। এছাড়া ভাসানী অনুসারী পরিষদের সঙ্গে থাকা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাম্প্রতিক নানা বক্তব্যে বিএনপি নাখোশ হলেও অনেকেই মনে করেন তিনি দলটির পরামর্শক।

সম্প্রতি বিএনপি বৃহত্তর ঐক্য ও দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করেছে তাতে এই মঞ্চের বেশির ভাগ দল অংশ নিচ্ছে। গত মঙ্গলবারও জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। দল দুটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে একমত হয়েছে। এছাড়া গতকাল বুধবার সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বৈঠক হয় বিএনপির। নতুন জোটবদ্ধ বেশিরভাগ দলের সঙ্গে আগামীতে বিএনপির বৈঠকের কথা রয়েছে। দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি এখন নতুন জোটবব্ধ না হয়েও অভিন্ন দাবিতে ভিন্ন মঞ্চ থেকে দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে।

সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সামনে বক্তব্য তুলে ধরতেই সাত সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ সেই প্রক্রিয়ার অংশ বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে নানা অভিমানে আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসা সাবেক মন্ত্রী আ স ম রব ও দলটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্নার দিকে বিএনপি বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন বলে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে। তেমন আশঙ্কা না থাকলেও সরকারের টোপে পড়ে তারা বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকছে বিএনপি।

নতুন জোট গঠনের বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ভোরের আকাশকে বলেন, শুধু নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কাজ করতে জোট গঠন করছি না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার কাজও করবে এই জোট। পাশাপাশি সংবিধান সংশোধনের কথাও বলছি আমরা। মতাদর্শে মিললে যে কেউ এই জোটে আসতে পারেন। জুন মাসের শেষ নাগাদ এই জোট আত্মপ্রকাশ করবে।

বিএনপির সঙ্গে অভিন্ন দাবিতে ভিন্ন মঞ্চ থেকে আন্দোলনের ব্যাপারে তিনি বলেন, যদিও বিএনপির ব্যাপারে কারো কারো আপত্তি আছে তারপরও বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে আপত্তি নেই। নতুন এই জোট মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করেন তিনি।

এদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, কোনো মঞ্চ, জোট বা দল বড় বিষয় নয়, যারা গণতন্ত্র উদ্ধারে রাজপথে থাকবেন বিএনপি তাদের সঙ্গে আছে।

তিনি বলেন, গণআন্দোলনের বিকল্প নেই। আর এই আন্দোলনে বিভিন্ন দল বা সংগঠনকে এক কাতারে আনার কাজ করছে বিএনপি।

মন্তব্য

Beta version