-->

সবার নজর কুমিল্লায়

সব কেন্দ্রেই ভোট ইভিএমে ■ ৬৪০ বুথে সিসি ক্যামেরা ■ মেয়র প্রার্থী ৫ ■ ২৭ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১০৮

এম বদি-উজ-জামান
সবার নজর কুমিল্লায়

কুমিল্লা সিটি করপোরেশেনে (কুসিক) ভোট আজ বুধবার। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে সোমবার মধ্যরাতে। এই নির্বাচনে ১০৫টি কেন্দ্রের সবটিতেই ভোট নেওয়া হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এজন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই মধ্যে সব কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইভিএম ও অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জাম। ৬৪০টি বুথে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

নির্বাচন উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটি থাকবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে এটাই প্রথম নির্বাচন ফলে এই কমিশন কেমন নির্বাচন করে তা দেখার জন্য দেশবাসীর চোখ থাকবে কুমিল্লার এই নির্বাচনের দিকে। বিশেষ করে জাতীয় সংসদের কুমিল্লা-৬ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ত্যাগ করার জন্য ইসি বললেও তার এলাকা ত্যাগ না করা এবং এ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের পর সেখানে কি ঘটে, কেমন নির্বাচন হয়, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কি থাকে, তা দেখার জন্য সবারই নজর থাকবে এই নির্বাচনের দিকে। তবে সেখানে একটি ভালো নির্বাচন হবে বলে এরইমধ্যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। তিনি বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ভোট করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।

এবারে কুসিক নির্বাচনে ৫ জন মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূলত প্রতিদ্বন্ধিতা হবে সদ্য সাবেক মেয়র বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের মধ্যে। কারণ সাক্কু কুসিকের পরপর দুইবার নির্বাচিত মেয়র। এরও আগে ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা পৌরসভার মেয়র ছিলেন তিনি। ২০১২ সালের প্রথম কুসিক নির্বাচনে সাক্কু আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফজলকে ৩০ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন। পরের বার ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সেই আফজলের মেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ওই সাক্কুর কাছেই প্রায় ১১ হাজার ভোটে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে বাহার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন না বিধায় সাক্কু বাহারের আনুকূল্য পেয়েছেন বলে সবার ধারণা। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। সরকারদলীয় প্রার্থী রিফাত এবার বাহারেরও প্রার্থী। আওয়ামী লীগ ও প্রতিটি অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে রিফাতের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বলে বলা হচ্ছে। এ কারণে ওই দুইজনের মধ্যেই এবার প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে সবার ধারণা।

এবারের কুসিক নির্বাচনে ওই দুইজন ছাড়াও আরো যে তিন মেয়র প্রার্থী আছেন তারা হলেন- বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজামউদ্দিন কায়সার, কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম। ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১০৮ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৬ জন প্রার্থী ভোট করছেন। এ বছর কুসিকে দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটারের মধ্যে এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার রয়েছেন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন দুজন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩৬০৮ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। সেখানে ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য ও র‍্যাবের ৩০টি টিম মোতায়েন থাকবে। নগরীর ৭৫টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। মাঠে কাজ করবেন ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও অর্ধশতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

রাজনৈতিক মাঠে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবারের কুসিক নির্বাচন বয়কট করলেও ১৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির অন্তত ১৬ জন নেতাকর্মী প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে ছয়জন সদ্য সাবেক কাউন্সিলর ও তিনজন ২০১২ সালের কাউন্সিলর। এছাড়া বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তিনজন নেতাও প্রার্থী হয়েছেন। এরা সবাই সদ্য সাবেক কাউন্সিলর।

এবারের কুসিক নির্বাচনে গত ২৭ মে থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারাভিযান শুরু হয়। নির্বাচনে পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে কার্যত তিনজন ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়েছেন । সর্বশেষ গত সোমবার প্রচারাভিযানের শেষ মুহূর্তে সাক্কুর বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ করেন সরকারদলীয় প্রার্থী রিফাত। যদিও সাক্কু এই অভিযোগ অস্বীকার করে তা প্রমাণের জন্য রিফাতের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। উল্টো তিনি সরকারদলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেছেন।

তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, দুই নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও রাশেদা সুলতানা, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক, কুমিল্লার এসপি নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। এই নির্বাচনে কোনো কারচুপি বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বিএনপি সরকার ও ইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে এই নির্বাচন কেমন হয় তা দেখার জন্য দেশবাসীর চোখ থাকবে কুমিল্লার নির্বাচনের দিকে।

মন্তব্য

Beta version