-->
শিরোনাম
জেলা পরিষদ নির্বাচন

নিয়ম ভেঙে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন অনেকেই

শাহীন রহমান
নিয়ম ভেঙে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন অনেকেই

ঢাকা: আইন অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জেলা পরিষদের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু আইন মানছেন না অনেকেই। নিয়ম ভঙ্গ করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও নির্বাচনী কাজে অংশ নিচ্ছেন। নিজের পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। এই অভিযোগে দুজনকে চিঠি দিয়ে সতর্কও করা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকটা গোপনে হলেও নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন অনেকেই। জেলা পরিষদ আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী এমপি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, সিটি করপোরেশনের মেয়ররা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। জানা গেছে, নিয়ম ভেঙে অনেকে নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

গত বুধবার আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে। মেয়র পদকে সরকারি সুবিধাভোগী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি গণ্য করা হয়েছে আচরণ বিধিমালায়। এ কারণে তিনি প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।

 

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একজন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন। শুধু মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন নয়, একই অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাট-১ আসনের অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদুর বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও নড়াইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নড়াইল জেলা পরিষদের ২নং ওয়ার্ড (নড়াইল সদর) সদস্য প্রার্থী খোকন সাহা ও ওবায়দুরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় এমপিদের অনেকেই পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচার চালাচ্ছেন। যদিও ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলেই সঙ্গে সঙ্গে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। একই সঙ্গে কোনো নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই অভিযোগে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলায় জেলায় নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে নির্বাচন কমিশন। কোনো জেলায় যাতে স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী বা প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি ভূমিকা না রাখতে পারে সে জন্য সতর্ক তারা। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্যমান আইনে জেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের কোনো এমপি বা মন্ত্রী নিজ এলাকায় গিয়ে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার বা নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারবেন না। শুধু মন্ত্রী-এমপিই নয়, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, হুইপ, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তিই নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারবেন না। শুধু নির্বাচনী কাজে অংশগ্রহণই নয়, তাদের ব্যবহৃত কোনো সরকারি যানবাহন বা অন্য কোনো বস্তুও প্রার্থীর কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তবে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন (যদি তিনি ভোটার হন)।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সতর্ক করে গত বুধবার চিঠি দেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল জলিল। চিঠিতে তিনি বলেন, স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে নিম্নস্বাক্ষরকারীর কাছে প্রতীয়মান হয় যে, আপনি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মেয়র, রাজশাহী সিটি করপোরেশন। আপনি একজন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেন। যেহেতু জেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা-২০১৬-এর বিধি ২ (১৪) অনুসারে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। সেহেতু ওই বিধিমালার বিধি ২২ (১) অনুসারে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচার কাজে বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। এ অবস্থায় রাজশাহী জেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর বিধি ২২ (১) যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো। রিটার্নিং অফিসার আব্দুল জলিল বলেন, রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে চিঠিতে প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থাকা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ৬০ জেলা পরিষদের নির্বাচন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। এ ছাড়া তিন পার্বত্য জেলা আঞ্চলিক পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি এই নির্বাচনের বাইরে রয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান পদে পাশাপাশি সাধারণ সদস্যপদে ভোটের প্রার্থনা করছেন ২ হাজার ২১৫ প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ৯০ জন। সাধারণ সদস্যপদে ১ হাজার ৫০৫ এবং সংরক্ষিত পদে ৬২০ প্রার্থী। তবে একক প্রার্থী থাকায় চেয়ারম্যান পদে আগেই নির্বাচিত হয়েছেন ২৭ জন। বাকি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় অনেকেই নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

তবে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যা আছে আচরণ বিধিমালায় : জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা (২০১৬) অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরূপ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হইলে তিনি কেবল তাহার ভোট প্রদানের জন্য ভোটকেন্দ্রে যাইতে পারিবেন। নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারি যানবাহন, অন্য কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণকে ব্যবহার করিতে পারিবেন না।

সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে প্রজ্ঞাপনের ১ নম্বর ধারার ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অর্থ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাহাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র।’

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version