-->
শিরোনাম

বিএনপির টার্গেট ঢাকা

এম সাইফুল ইসলাম
বিএনপির টার্গেট ঢাকা

ঢাকা: নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে এবার ঢাকাকে টার্গেট করে এগোচ্ছে বিএনপি। সব কর্মসূচিতে ঢাকায় শক্ত অবস্থানে মাঠের থাকার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। আগামী বছরের শুরুতেই কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনপি নেতারা রাজধানীতে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে সাব-কমিটির গঠনেরও চিন্তা করছেন। এ ছাড়া ঢাকার কর্মসূচিতে পাশের জেলাগুলোর নেতাকর্মীদেরও যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি। এবার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে রাজধানীতে সমমনা দলগুলো নিয়ে ভিন্নমঞ্চ থেকে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত দেবে বিএনপি।

 

বিএনপি নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি জোটের আন্দোলনে সারা দেশ কার্যত অচল ছিল। কিন্তু ঢাকায় কার্যকর আন্দোলন করতে না পারায় সফলতা পায়নি। তাই এবার ঢাকায় কঠোর আন্দোলন করতে কাজ করছেন তারা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।

 

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে জোটটি। আওয়ামী লীগ জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হয়। এরপর থেকেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার শরিক জোটগুলো নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা আবার চালুর দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। আওয়ামী লীগ সরকারে থেকেই নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় থাকে। তখন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেন।

 

দুই দলের পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় উত্তপ্ত হয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ওই পরিস্থিতির মধ্যে যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচারের বিষয়টিও যুক্ত হয়। ফলে জামায়াতও অনেকটাই শক্ত অবস্থান নিয়ে বিএনপির সঙ্গে রাজপথে সরকার পতন আন্দোলনে নামে। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন বর্জন করে রাজপথে কঠোর আন্দোলন শুরু করে জোটটি। টানা হরতাল-অবরোধে অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশ। ওইসময়ের আন্দোলন একসময় সহিংসতায় রূপ নেয়।

 

রাজপথে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বা জামায়াতের সংঘর্ষ নিত্যদিনের খবর হয়ে ওঠে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ৪১ দিনে ১২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন নির্বাচনী সহিংসতায় মারা যান ১৯ জন। ওই নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনেরও রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ।

 

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের কঠোর আন্দোলনের পরও সফলতা না পাওয়া নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ করে এবার পথ চলছে বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, ওইসময় রাজধানী ছাড়া অন্যসব মহানগর, জেলা ও উপজেলায় কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করে বিএনপি জোট। কিন্তু রাজধানী ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। যে কারণে সারা দেশ অচল থাকলে সরকারকে চাপে ফেলা যায়নি। তাই এবার দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিএনপি ঢাকাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। টানা প্রায় তিন মাস ধরে চলমান মাঠের কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ের থেকেও ঢাকাকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে।

 

গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি ১৬ দিনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও দলটি ঢাকার ১৬ স্থানে মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এছাড়া ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি পালনে ঢাকাকে সামনে আনছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। আগামী দিনে ঢাকায় কর্মসূচি পালনে বিএনপির তৎপরতা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে ভোরের আকাশের এ প্রতিবেদকের কথা হয়।

 

তারা বলছেন, দল এবার রাজধানীকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বেছে নিয়ে এগোচ্ছে। সে লক্ষ্যে দল ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে কমিটিও গঠনের কাজ চলছে। আন্দোলনের কৌশল নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কমিটির সদস্য ও কর্মীদের বিশেষ ধারণা দেবেন।

 

জানা গেছে, মহানগরের পরিচিত মুখ উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ,সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদল নেতা ইসহাক সরকার ও রবিউল ইসলাম নয়নসহ কয়েকজন ঢাকা মহাগরের কর্মসূচি বাস্তবায়নে মাঠে থেকে কাজ করবেন। সমন্বয়কারী হিসেবে কয়েক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

 

এ ছাড়া ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকেও ঢাকায় বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিবেদিত কর্মীদের আনার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সূত্র বলছে, সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পর আগামী বছরের শুরুতে দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে এক দফার কর্মসূচিতে ঢাকায় অন্য দলগুলোকে যুগপৎ কর্মসূচি পালনে নির্দেশনা দেবে বিএনপি। সবাই একইদিনে এক মঞ্চে না উঠে ভিন্ন মঞ্চ ও স্থানে কর্মসূচি পালনে জনবল দিয়েও বিএনপি ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগিতা করবে।

 

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যুবদলের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এবার ঢাকায় কঠোর আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তিনি বলেন, রাজধানীতে কার্যকর আন্দোলন করতে না পারলে সরকারকে চাপে ফেলা কঠিন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে আমাদের কিছু শিক্ষা আছে এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। স্বৈরাচার পতনে এবার কৌশল এবং সর্বশক্তি দিয়ে রাজধানীতে কঠোর আন্দোলন করা হবে। তবে আন্দোলন উপলক্ষে কমিটি গঠনের বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি তার।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, সারা দেশের ন্যায় এবার রাজধানীতে কঠোর আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। আন্দোলনে কৌশলও থাকবে। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে অন্যান্য জেলার মতো ইতোমধ্যে রাজধানীতে নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন। কোনো ভয়ভীতি বা বাধা সৃষ্টি করে এবার ঢাকায়ও নেতাকর্মীদের দমানো যাবে না।

 

কর্মসূচি পালনে ঢাকায় বিশেষ নেতাদের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো বিষয়টি তিনি জানেন না। সরকার বিরোধী সব দল মতের মানুষকে নিয়ে আন্দোলন করা হবে বলে জানান আমীর খসরু।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version