ঢাকা: টানা কর্মসূচি পালনের পর বিএনপি এবার বিভাগীয় সমাবেশ সফল ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া ঠিক করতে জোরালোভাবে কাজ করছে। দলটি চলতি সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংলাপ শুরু করেছে।
চলমান সংলাপ শেষ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবিতে এ মাসেই যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করবে বিএনপি। এ ছাড়া বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ আগামী ৮ অক্টোবর শুরু হয়ে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় শেষ হবে। একদিকে বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করে তৃণমূলে আন্দোলনের বার্তা দেয়া, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে রূপরেখা চূড়ান্ত করে ‘এক দফা’ আন্দোলনের সিদ্ধান্তে যাচ্ছে দলটি। আগামী বছরের জানুয়ারিতেই আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি।
দলটির নেতারা স্বীকার করে বলছেন, আন্দোলনই তাদের একমাত্র ভরসা। রূপরেখা চূড়ান্তের পর তারা এক দফা আন্দোলনের বিকল্প দেখছেন না।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে হেরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়বরণ করে বিএনপি। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। যদিও বিএনপির অভিযোগ, ওই নির্বাচন ছিল একতরফা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বেশ সতর্কভাবে পথ চলতে শুরু করে বিএনপি। অনেকটাই একলা চলো নীতিতে এগোতে থাকে বিএনপি। ২০২০ থেকে শুরু করে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিশ^ করোনার থাবায় বিপর্যস্ত হয়। করোনায় সরকারি বিধিনিষেধে অনেকটাই সংকুচিত হয়ে আসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। তবে বছরের শেষ সময়ে এসে করোনাভাইরাসের প্রভাব কমলে বেশ জোরেশোরে মাঠে নামে বিএনপি। বিশেষ করে অসুস্থ দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি ও দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামে বিএনপি। তাতে দেশব্যাপী বেশ সাড়া পায় দলটি।
২০২২ সালের শুরু থেকে বেশ জোরেশোরে বিএনপি দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে তৎপর হয়। বছরের শুরু থেকে মিত্রদের নিয়ে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠনে কাজ শুরু করে দলটি।
জানা গেছে, জুলাই মাসের শুরু থেকেই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে মাঠে আছে বিএনপি। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দৃঢ়ভাবে মাঠে নামে বিএনপি। একই সঙ্গে ভোটাধিকার হরণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ইস্যুও রয়েছে। সারা দেশে বিএনপি এসব ইস্যুতে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, এমনকি ইউনিট ও হাটবাজারে কর্মসূচি পালন করে।
গত ২২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী লাগাতার সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দলটি। ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও কর্মসূচি ছিল বিএনপির। এ ছাড়া গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি নতুন করে ১৬ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। গত মঙ্গলবার ছিল এই কর্মসূচির শেষ দিন। এসব কর্মসূচি পালনে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও বিএনপি মাঠে ছিল।
ঢাকার কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হবে। ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের মধ্যদিয়ে বিভাগীয় কর্মসূচি শেষ করবে বিএনপি। দলটি এই সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে কাজ করছে।
ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছে। গত ১ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এরপর প্রতিদিন দুই-তিন বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বেঠক করছে বিএনপি।
জানা গেছে, আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের দৃঢ় মনোভাব তৃণমূলে ব্যাপকভাবে পৌঁছে দিতে বিভাগীয় সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়াতে চায় বিএনপি। গত কয়েক দিন বৈঠকে অংশ নেয়া নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বিভাগীয় সমাবেশের প্রস্তুতির মাঝে বিএনপি আবারো সমমনা বা মিত্রদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। রোববার থেকে এই সংলাপ শুরু হয়েছে। প্রথম দিন কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপ ছিল বিএনপির। গতকালও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও এলডিপির সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করতে পরিকল্পনা গ্রহণে বিএনপির এই সংলাপ। চলতি মাসেই দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষ করে মাসের শেষের দিকে আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করতে চায় বিএনপি। কিছুদিন আগেও বিএনপি এসব দলের সঙ্গে একবার সংলাপ করেছিল।
একদিকে বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি কঠোর আন্দোলনের বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দিতে কাজ করছে; অন্যদিকে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে মাঠে থাকবে এমন দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপে আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার কাজ করছে তারা।
বিএনপি ও তার মিত্র দলের একাধিক নেতা বলছেন, ডিসেম্বরে বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হলে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা অনুযায়ী এক দফার আন্দোলনে যাবে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে। দ্রুত সময়ে রূপরেখা চূড়ান্ত হবে। এ ছাড়া বিভাগীয় সমাবেশ বাস্তবায়নে কাজ চলছে। সবমিলিয়ে বিএনপি ও তার মিত্ররা দ্রুত সময়ে একদফার আন্দোলনে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আর বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করতে কাজ চলছে। কারা কারা এই যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে বা রূপরেখায় চমক আছে বলে জানান তিনি। এক দফার আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
ভোরের আকাশ/এমএসআই/জেএস/
মন্তব্য